,

ঐতিহ্যবাহী মিরের টিলা কেটে উজার করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড় কাটার মহোৎসব

জসিম তালুকদার ॥ নবীগঞ্জে কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা। উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলা ভুমি পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে খ্যাত দিনারপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙগুলি দেখিয়ে অবাধে পাহাড় ও টিলা কেটে উজাড় করছে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা। কিছু দিন বন্ধ থাকার পর বিগত প্রায় দু’ মাস ধরে ওই পরগনার সবচেয়ে উচুঁ পাহাড় হিসেবে পরিচিত মিরের টিলা কেটে উজার করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। উক্ত প্রভাবশালী সোনা মিয়া স্থানীয় বনগাওঁ গ্রামের মৃত নওয়াব উল্লার ছেলে। প্রকাশ্যে উক্ত পাহাড় কেটে মাটি ও বালি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় লোকজন অদৃশ্য কারনে নীরবতা পালন করছেন। উক্ত পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় ও টিলা ধসে মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। ভারসাম্য হারিয়ে মানুষের জীবন যাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে পত্র-পত্রিকায় এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের নজরে আসে। এতে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। কিন্তু কিছু দিন পরই আবার শুরু হয়ে যায় পাহাড় কাটার মহোৎসব। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে দিনারপুর অঞ্চলের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র পশু-পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় পশু-পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকত দিনারপুরের পাহাড়ি অঞ্চল। বিশেষ করে বন্য বানরের জন্য বিখ্যাত ছিল এই এলাকা। আর এসব দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসতেন। কিন্তু কালের বির্বতনে আজ এ সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। পাহাড় কেটে জঙ্গল উজাড় করে ফেলায় এখন আর আগের মতো পশু-পাখি দেখা যায় না। তাছাড়া অবাধে পাহাড় কাটার ফলে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে। গত ৬/৭ বছরে নবীগঞ্জের দিনারপুরে পাহাড়ে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের ৬ জনসহ অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক যুগে উপজেলার কয়েকশ’ সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় টিলা সম্পূর্ণ এবং আংশিক কেটে সমান করা হয়েছে। ফলে এসব পাহাড় ও টিলা ধসে মৃত্যুর ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো বেশির ভাগই কাটা হয়েছে আবাসিক প্রকল্প, বাণিজ্যিক মার্কেট কিংবা ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি ও ঘর তৈরির মাটি ভরাটের জন্য। এছাড়া ২০০১ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মাণকাজ শুরু হলে নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর অঞ্চলের পাহাড় কেটে উজাড় করে মাটি নেয়া হয়। এসব পাহাড় ও টিলা কাটার ফলে দ্রুত প্রাকৃতিক বির্পযয় ঘটছে। বিলীন হচ্ছে জীববৈচিত্র এবং পরিবর্তন হচ্ছে ভূমির মানচিত্র। এছাড়া পাহাড় ও টিলা কেটে পাদদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি-ঘর। ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। গত ৫ বছর আগে নবীগঞ্জের দিনারপুর পাহাড়ি এলাকায় মাটি চাপা পড়ে মর্মান্তিকভাবে একই পরিবারের ৬ জন এবং মহাসড়কে মাটি নেয়ার সময় পাহাড় ধসে ৩ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জানা গেছে, এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহায়তায় স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে এসব পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এমনকি সরকারি রাস্তাঘাট নির্মাণেও ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় ও টিলার মাটি এবং বালু। এক্ষেত্রে স্থানীয় তহশীল অফিসের ভুমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেছেন। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার সুযোগে রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট লোকজন নির্বিচার পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা সরকারি বা শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরবতা পালন করেন। আবার মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে টিলার মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পরিবহন আটক করলেও রাজনৈতিক চাপে অথবা উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে জমির দামের ঊর্ধ্বগতিতে অনেকেই প্রলুব্ধ করছে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কেটে সমান করে বিক্রি করতে। হাউজিং ব্যবসা ও বাণিজ্যিক মার্কেট পাহাড় ও টিলার মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় ও টিলা কাটার প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত নবীগঞ্জে কোনো বড় ধরনের আন্দোলন হয়নি। আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনী মাঝে মধ্যে ট্রাক ও শ্রমিকদের আটক করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এর ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার পরিবেশ পরিস্থিতি এখন হুমকির মুখে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পাটির আহ্বায়ক দিনারপুর এলাকার বাসিন্দা ডা: শাহ আবুল খায়ের বলেন, পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে অনেকে পাহাড় কাটছেন তাদের বাড়ি সমতল করার জন্য। তবে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাহাড় কাটা বন্ধ করতেই হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এ বিষয়ে অবগত নয়, এমন কি কেউ কোন অভিযোগও দেন নি বলে জানান। তবে ঘটনাটি সঠিক হলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর