,

আজ সেই ১৮ আগস্ট মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে মহিলাসহ ৮৮ জনকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাকবাহিনী

স্টাপ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি একটি প্রত্যন্তন্ত্র গ্রাম। এই গ্রামের লোকেরা হিটলারের নাম শুনেছে। তার নাৎসি বাহিনীর নাম শুনলেও শুনে থাকতে পারেন। তবে নাৎসি বাহিনীর ভয়াবহাতার লোমহর্ষক কাহিনী এসব গ্রামীণ মানুষদের কাছে একেবারেই অজানা। অথচ কে জানতো, একদিন এই গ্রামীণ খেটে খাওয়া মানুষদের উপরই নেমে আসবে নাৎসি বাহিনীর চেয়েও ভয়ংকর এক বাহিনীর ভয়াল নির্যাতন! ১৮ আগস্ট ১৯৭১। সকাল। গ্রামের চন্ডি মন্দিরে মনসা ও চন্ডিপুজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো হিন্দু অধ্যুষিতচ্ছ গ্রামের বাসিন্দারা। এ সময় ৪০/৫০টি নৌকাযোগে পাকবাহিনী এসে হামলা চালায়। পুজারত নারী-পুরুষকে চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে একই পরিবারের ১১ জনসহ ৮৮ জন গ্রামাবাসীকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, এ ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখে আরো কমপক্ষে ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে, পাক বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় ভাটি বাংলার শিক্ষা-দীক্ষা, খাদ্য ভান্ডারে সমৃদ্ধশালী গ্রাম মাকালকান্দি থেকে লুটে নেয় কোটি টাকার সম্পদ। যাবার সময় পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া অনেক বাড়ি ঘর। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ভাটি অঞ্চলে দ্বীপের মতো অবস্থান কাগাপাশা ইউনিয়নের মাকালকান্দি গ্রামটির। শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সমৃদ্ধশালী গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। ১৮ আগস্ট স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক বাহিনীর হামলায় মৃত্যুবরণকারী ৮৮ জনের মধ্যে ৪৪ জনই মহিলা। তারা ওই সময় চন্ডি মন্দিরে পুজার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় পুরোচ্ছ গ্রামে পেট্টোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং লুটে নেয়া হয় বিপুল পরিমাণ ধন সম্পদ। এদিকে মাকালকান্দি গ্রামের বেঁচে যাওয়া লোকজনদের অনেকে আবারো হামলার আশংকায় ভারতে পালিয়ে যায়। ভারতে যাওয়ার সময় ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আরো প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারায়। ১৮ আগস্টের ওই হামলায় মাকালকান্দির অনেকে হয়ে পড়েছে নিঃস্ব, অসহায় ও সম্ভলহীন। হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড এডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, মাকালকান্দির ক্ষিতিগ্রস্থদের পূনর্বাসের জন্য বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কংশ মোহন দাশ (৮৫) জানান, তার চোখের সামনে পিতাসহ অন্যদেরকে মেরে ফেলে পাকহানাদারবাহিনী। মিনতি রানী (৭৬) এর কোল থেকে ৪ দিনের শিশুকে গুলি করে হত্যা করে। এদিকে স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর ২০০৮ সালে এ গ্রামে গণহত্যা দিবসে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের উদ্যোগে কোন দিবস পালন করা হয়নি। এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের দাবী দিবসটি প্রশাসনের মাধ্যমে পালন করা হউক।


     এই বিভাগের আরো খবর