,

পুলিশ সুপারের আশ্বাসে চয়ন হত্যাকান্ডের ঘটনায় বানিয়াচং দৌলতপুর এলাকায় স্বস্থি ॥

রাকিল হোসেন ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার চৌকি গ্রামের বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর গ্রামবাসীর হামলায় নিহত চয়ন দাশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র গত ২৬ আগষ্ট নবীগঞ্জ থানা কমপ্লেক্সে আয়োজিত ওপেন হাউজ ডে অনুষ্টানে বলেন দৌলতপুর গ্রামের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে এবং নিরাপরাধ কোন ব্যক্তি হয়রানির স্বীকার হবে না বলে আশ্বস্থ করেন। দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্ধা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীমালীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান মিয়াজী এক আবেদনের পেক্ষিতে তিনি এ ব্যাপারে আশ্বস্থ করেন। হত্যাকান্ডের পর থেকে অজ্ঞাতনামা আসামীর ভয়ে দৌলতপুর গ্রামের প্রায় ১০ হাজার নারী পুরুষ গ্রেফতার আতংকে বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্বগোপনে চলে যায়। ফলে গ্রামের দোকানপাটসহ সর্বত্র দেখা দেয় শূন্যতা। দৌলতপুর গ্রামের চকবাজারের ব্যবসায়ীরা সব পালিয়ে যাওয়ার ফলে শূন্যতা দেখা দেয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গ্রামটি পুরুষ শুন্য হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সুপারের এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আত্বগোপনে থাকা সাধারন মানুষ যারা ঘটনার সাথে জড়িত নয় তারা গ্রামে ফিরে এসে পূর্বের মতই নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্টান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তাদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। তবে হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামীসহ যারা ঘটনার সাথে জড়িত তারা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১০ আগষ্ট বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার পুত্র সম্ভল মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার চৌকি গ্রামের পিলু দাশের ফিশারীতে জোরপূর্ব মাছ ধরতে যায়। এতে পিলু দাশ বাধাঁ দিলে সম্ভল মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তাকে প্রাণনাসসহ উচিত শিক্ষা দেয়ার হুমকি দেয়। এর জের ধরে দুপুরে দৌলতপুর গ্রামের মৃত চান মিযার পুত্র আবুল কালাম আজাদ ও মৃত সোলেমান মিযার পুত্র রব্বানী মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় ৮০/৯০ লোক দেশীয় অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অরবিন্দু দাশের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালায। খবর পেযে পিলু দাশ ও চয়ন দাশ ঘটনা স্থলে গিয়ে তাদেরকে নির্বৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত লোকজন তাদের উপরও হামলা করে। এতে চয়ন দাশ গুরুতর আহত হন। এদের বাচাঁতে রতন দাশ এগিয়ে আসলে তার উপরও হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রামের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দৌলতপুর গ্রামের লোকজন চৌকি গ্রামের সমীরণ দাশের একটি মটর সাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জ ও বানিয়াচং-এর মার্কুলী ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ঘটনার পরপরই আহত চয়ন দাশ (৩০) ও রতন দাশ টিক্কা (৩৫)কে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তিকৃত চয়ন দাশের অবস্থার অবণতি ঘটলে শুক্রবার দুপুরে তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৩ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ১৫ আগষ্ট দুপুরে চয়ন দাশের মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে সমীরন রায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৮০/৯০ জনকে অজ্ঞাত রেখে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনাতগঞ্জ ফাঁড়ির এসআই ধর্মজিৎ সিনহা লুট করে নেয়া মটর সাইকেলটি উদ্ধারসহ দৌলতপুর গ্রামের অজ্ঞাত আসামী মইনুল ইসলাম ময়নাকে গ্রেফতার করেন। গত ২৪ আগষ্ট বিকেলে হবিগঞ্জের এডিশনাল এসপি সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধ শতাধীক পুলিশ আসামী গ্রেফতারে দৌলতপুর গ্রামে চিরুনী অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু পুলিশী এ অভিযানের খবর পেয়ে গ্রামবাসী নৌকাযোগে হাওরের দিকে পালিয়ে যাওয়ায় আসামী গ্রেফতার করা সম্বব হয়নি। এরই প্রেক্ষিতে বানিয়াচং উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ১০ হাজার লোককে পুলিশ হয়রানি থেকে বাঁচানোর আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিআইজি ও হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার, ওসি নবীগঞ্জ থানা ও বানিয়াচং থানার ওসি বরাবরে একটি আবেদন করেন দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্ধা কেন্দ্রীয় আওয়ামী ওলামালীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান মিয়াজী। তিনি গ্রামবাসীর পক্ষে যাতে করে নিরহ মানুষ হয়রানির স্বীকার না হয় বিষয়টি লিখিত ভাবে উল্লেখিত দপ্তরে আবেদন করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর