,

নবীগঞ্জের বেগমপুর গ্রাম রণক্ষেত্রপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশের ৬৭ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ ॥ পুলিশসহ আহত ৫০, আটক ৮

রাকিল হোসেন ॥ নবীগঞ্জে আজিজ বাহিনীর তান্ডবে গতকাল রবিবার বিকালে বেগমপুর গ্রামে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ কমপক্ষে ৬৭ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করেছে। এ সময় আজিজ বাহিনীর প্রধান আব্দুল আজিজসহ উভয় পক্ষের ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভয়াবহ এ সংঘর্ষে থানার দারোগা, কনস্টেবলসহ প্রায় অর্ধ শতাুধিক আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে উভয় পক্ষের ২০/২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো দু’শতাধিক লোকদের আসামী করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে। আহতদেরকে সিলেট, হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত পুরুষ শুন্য এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিযনের বেগমপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ও সিতার মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ চলে আসছে। এরমধ্যে প্রভাবশালী আব্দুল আজিজ গড়ে তুলে আজিজ বাহিনী। তাদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্থ। নিরীহ লোকদের উপর নানা অত্যাচার নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলতে সাহস পায় না। গতকাল রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে সিতার মিয়ার পক্ষের মুজিবুর রহমান একটি ইট বুঝাই ঠেলাগাড়ী নিয়ে আব্দুল আজিজ পরে আব্দুল্লাহ মিয়ার বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়ার পথে তাদের সাথে বাদানুবাদ হয়। এরজের ধরে বিকাল ৫টার দিকে আব্দুল আজিজ তার লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিপক্ষ সিতার মিয়ার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার এসআই নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা কালে উত্তেজিত লোকজন পুলিশের উপর হামলা করে। মুহুর্তের মধ্যে বেগমপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ প্রায় শর্টগানের শতাধিক রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করেছে। হামলা, সংর্ঘষ এবং পুলিশের ছুরা গুলিতে পুলিশের দারোগা, ৩ কনস্টেবলসহ প্রায় অর্ধ শতাধিত লোক আহত হয়েছে। ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আব্দুল বাতেন খানেঁর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন এবং উভয় পক্ষের ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আহত সিতার মিয়া (৩০), জয়নাল আবেদীন (৩০), সিরাজুল ইসলাম (৫৫)কে পুলিশের তত্ত্বাবধানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। অপর গ্রেফতারকৃত আব্দুল আজিজ, লুৎফুর রহমান, সিপুতুর রহমান, শেখ সাদী ও সফিকুল ইসলাম থানা হাজতে আটক রয়েছে। গুরুতর অন্যান্য আহতদের মধ্যে স্বাধীন দাশ (৪০), জহুরুল ইসলাম (১৭), মুজিবুর রহমান (৪২), আরজু মিয়া (৩২)কে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে প্রেরন এবং অপর আহত সামছিয়া বেগম (৭০), রিংকু দাশ (১৪), মনি দাশ (২০), এস.আইা নজরুল ইসলাম (৩৬), কনস্টেবল দেবাশিষ শর্মা (২০), রফিকুল ইসলাম (২৩), নজমুল হোসেন (২০), মুজিবুর রহমান (৪৫), খালেদ মিয়া (৩০), রানুমিয়া (৩৬) ও সেলিম মিয়া (২৫)কে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে এবং আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ৬৭ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনর্চাজ আব্দুল বাতেন খাঁন জানান, ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা কালে লোকজন পুলিশের উপর হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের ৮ জনকে গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সিতার মিয়া জানান, আব্দুল আজিজ এলাকার একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তার বাহিনী দিয়ে ইতিপুর্বে সিতারের পরিবারের লোকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারপিট করেছে। রবিবার বিকালে হঠাৎ করে আজিজ বাহিনীর লোকজন তার বাড়ি ঘরে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করলে তারা বাধা দেন। এক পর্যায়ে সংর্ঘষ ছড়িয়ে পড়ে। আব্দুল আজিজের ভাই মুজিবুর রহমান জানান, জয়নাল, সাদী ও শফিকুল তার ছেলে রুহুল আমীনকে মারপিট করলে ঘটনার সুত্রপাত হয়। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর