,

সরকারকে চাপ দিতে হিলারির কাছে ইউনূসের ই-মেইল ফাঁস

সময় ডেস্ক ॥ গ্রামীণব্যাংককে নিজের আয়ত্তে রাখতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেনÑ এমন কথা নানাভাবে জানা গেলেও এই প্রথম এমন একটি অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া হিলারি ক্লিনটনের হাজার হাজার ই-মেইলের মধ্য থেকে এমন সাতটি ই-মেইল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটনের গোপন ই-মেইল মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতে গেলে তারা সেটা ‘পাবলিক’ করে দেয়। সেখানে প্রায় দুইশ ই-মেইলের মধ্যে অন্তত ৭টিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ই-মেইল আছে। যাতে ইউনুস হিলারির কাছে ম“ চেয়েছেন। এ প্রতিবেদকের কাছে আসা এমন দুটি ই-মেইল থেকে জানা যায়, ‘গ্রামীণ ব্যাংকে নিজের অবস্থান ফিরে পাওয়া এবং সেখানে তার অবস্থান সুসংহত করতে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস।’ এ মেইল দুটি ড. ইউনূস নিজে লিখেছিলেন হিলারি ক্লিনটনের উদ্দেশে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তৎকালীন কর্মকর্তা মেলানি ভিরবারের কাছে লেখা এ মেইলগুলো হিলারিকে ‘ফরওয়ার্ড’ করা হয়েছিল। হিলারির ম“ চেয়ে লেখা ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর একটি ই-মেইলে ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ১৬ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত ওই বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংক ও আমার ইস্যু ‘বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে’ তোলা যায় কিনা দেখো।’ এই ই-মেইলে ইউনূস আরও লিখেছেনÑ ‘আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলাম। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতই আমাকে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন আমার সমস্যা নিয়ে আমি সরাসরি কথা বলতে পারি। ছয় সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনো সাড়া পাইনি।’ কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দেওয়া ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’-এর ব্যাপারে এ ই-মেইলে ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই আমাকে এই পদকের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং তার দল এ ব্যাপারে একটি শব্দও বলেনি।’ এ ই-মেইলের শেষে ড. ইউনূস লিখেছেনÑ ‘বুঝতেই পারছো, সমস্যাটি কত গভীর!’ একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর লেখা আরেকটি ই-মেইলে ইউনূস বলেছেনÑ কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আমাকে নিয়ে ভয়ঙ্কর কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নিতে কয়েকদিনের মধ্যে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন; সেক্রেটারি হিলারির সঙ্গেও তার দেখা হবে। দেখো আমার ব্যাপারে তার এ কঠোর অবস্থান দূর করার কোনো উপায় বের করা যায় কি না? তা না হলে ব্যাপারটি খুবই বিস্ফোরণের মতো ব্যাপার হবে। আমি তোমাকে শান্তি স্থাপনকারী (ইউনূস লিখেছেন পিস মেকার) হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শিগগির দেখা হবে।’ এ ই-মেইল চালাচালির অনেক পরে ২০১১ সালের ২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এক আদেশে নির্ধারিত ৬০ বছর বয়স বেশি হওয়ার কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করে। ততদিনে ইউনূসের বয়স অবশ্য ৭০ হয়েছিল। এরপরও ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে কাজে লাগানোর নানা চেষ্টা করেন। ইউনূস অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের সবগুলো ধাপেই যান; তবে তার পক্ষে রায় যায়নি। সমালোচকরা বলেন, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক দল গড়ার ঘোষণা দিয়েই মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ড. ইউনূস। এ কারণে শেখ হাসিনা তখন ‘ইউনূসকে সুদখোর’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার সময় ব্যক্তিগত কম্পিউটার সার্ভিসকে তিনি কি কি কাজে ব্যবহার করেছেন সে বিষয়ে তদন্তের অংশ হিসেবেই ই-মেইলগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, তার মধ্য থেকে দেড়শর মতো ই-মেইল পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি। সেগুলোর কিছু কিছু অংশ কেটেছেঁটে বাদ দেওয়া হয়েছে। মিসেস ক্লিনটন অবশ্য বলছেন যে, এ সার্ভার ব্যবহার করে কোনো ধরনের গোপনীয় তথ্য তিনি কোথায়ও পাঠাননি এবং গ্রহণও করেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, নিউ ইয়র্কের বাড়িতে থেকে ব্যক্তিগত ই-মেইল সার্ভার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। হিলারির বিরোধীরা বলছেন, অনিরাপদ কম্পিউটার সার্ভিস ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তিনি ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। এদিকে হিলারি ক্লিনটনের পাশাপাশি বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর