,

নবীগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে আগুনে পুড়ে নিহত রোমানার দাফন সম্পন্ন ঘটনার নেপথ্যের রহস্য তদন্ত করছে পুলিশ মৃত্যুর আগেই কাবিন ছিনিয়ে নিয়েছিল রোমানার স্বামী

এম.এ আহমদ আজাদ ॥ নবীগঞ্জের পল্লীতে যৌতুকের জন্য আগুনে পুড়ানো গৃহবধু রোমানার দাফন গতকাল সকালে তার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। রোমানার মা-বাবা ও ১ বছরে শিশু কন্যা তাসলিমার আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এদিকে রোমানার স্বামী কোথায় থেকে পেট্রোল নিয়ে আসে এবং গ্রামের কার বাড়িতে পেট্রোলের ড্রাম ছিল তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে। রোমানা যাতে যৌতুক নির্যাতন মামলা করতে না পারে সেই জন্য পাষন্ড স্বামী তার কাবিন জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এখনো তার মা-বাবা রোমানার কাবিন ফেরত পাননি। পুলিশ সুত্র জানায়, পুলিশের কাছে স্বামী নানু মিয়া পেট্রোল ঢেলে তার স্ত্রী রোমানা’র গায়ে আগুন লাগানোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। এখন প্রশ্ন জেগেছে রোমানা’র স্বামী গ্রামের মধ্যে কোথায় পেট্রোলের ড্রাম লুকিয়ে রেখেছিল। নানু মিয়ার এঘটনার নেপথ্যে নায়কদের খোঁজে বাহির করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কে কারা রোমানার স্বামী নানু মিয়াকে আশ্রয় দিয়েছিল, কার আশ্রয়ে রোমানার স্বামী তার বাবার বাড়ি থেকে কাবিনের কপি চিনিয়ে নিয়ে যায় এসব বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। রোমানা’র এক বছরের শিশু তাসলিমা বেগম গতকাল মায়ে’র লাশের পাশে বসে মায়ের বুকের দুধ পানের জন্য মা..মা..বলে ডাকছিলো..এদৃশ্য দেখে রোমানার মা কাজল বিবি ও বাবা আব্দুর রহিম বার বার হাওমাউ করে কেঁদে মুর্চা যাচ্ছিলেন। এসময় তাসলিমা দুহাত বুলিয়ে শুধু ডাকছিলো ও..মা ও..মা। তাসলিমা জানে না তার মা আর কোনদিন তাকে বুকের দুধ পান করতে দিবে না। এসময় গ্রামে শত শত মানুষের চোখে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রোমানার মা কাজল বিবি জানান আমার মেয়েকে শুধু মেরে নির্যাতন করে নানু কান্ত হয়নি সে আমার মেয়ের কাবিনের কপি জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় যাতে আমার আদালতে কোন মামলা করতে না পারে। আমি রোমানার হত্যার জন্য নানুসহ নেপথ্যে যারা আছে তাদের বিচার চাই। তিনি এসময় সাংবাদিক ও পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকার জন্য শোকরিয়া আদায় করে বলেন আমি গরিব মানুষ নিরস্বার্থ ভাবে পুলিশ ও সাংবাদিকরা কাজ করছেন এইজন্য কৃতজ্ঞ। রোমানার বাবা আব্দুর রহিম, বলেন আমি কোন দিন মেয়েকে ফেরত পাবো না জানি কিন্তু তার সঠিক বিচার যদি দেখে যেতে পারি তাহলে স্বার্থক। তিনি বলেন আমার মেয়ের হত্যার বিষয়টি মহিলা এমপি কেয়া চৌধুরী তদারকি না করলে হয়তো আমরা এখনো কোন মামলা করতে পারতাম না। তিনি আমার (গরিবের) মেয়ের জন্য অনেক কিছু করেছেন। রোমানার পারিবারিক সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের ছিটফরিদপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের কন্যা রোমানা বেগম (২৩) স্বামীর বাড়িতে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়ে কিছুদিন পূর্বে তার বাবার বাড়ি এসে আশ্রয় নেয়। গত বুধবার গভীর রাতে তার পাষন্ড স্বামী নানু মিয়া (৩৫) ঘুমন্ত অবস্থায় তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় রোমানার চিৎকারে পরিবারের লোকজন জেগে উঠে দেখেন তার সারা শরীর পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিক অবস্থায় রোমানাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তার অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাতেন খাঁন জানান, পুলিশের কাছে স্বামী নানু মিয়া পেট্রোল ঢেলে তার স্ত্রী রোমানা গায়ে আগুন লাগানোর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। রোমানা স্বামী গ্রামের মধ্যে কোথায় পেট্রোলের ড্রাম লুকিয়ে রেখেছিল। নানু মিয়ার এঘটনার নেপথ্যে নায়কদের খোঁজে বাহির করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কে বা কারা রোমানার স্বামী নানু মিয়াকে আশ্রয় দিয়েছিল, কার আশ্রয়ে রোমানার স্বামী তার বাবার বাড়ি থেকে কাবিনের কপি চিনিয়ে নিয়ে যায় এসব বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। এব্যাপারে স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন আমি এই মর্মান্তিক বিষয়টি কেন কার সাহসে নানু এতো বড় ঘটনা শ্বশুড় বাড়িতে এসে করলো সেটা তদন্ত করে বাহির করা প্রয়োজন।


     এই বিভাগের আরো খবর