,

নবীগঞ্জের আলোচিত শাহজালাল হোটেলের বিষয় নিয়ে পুলিশ বিপাকে সালিশ বোর্ডের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম ॥ পুলিশকে বিবাদী করে জজ কোর্টে মামলা!

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জ শহরের শাহজালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট নিয়ে উপজেলার সর্বত্র নতুন করে আলোচনা সমালোচনা চলছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে সালিশ বোর্ড কর্তৃক দেয়া ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামকে নিয়ে মানুষের মাঝে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে হোটেলের মালিক আমেরিকা প্রবাসী শেখ সাইদুর মিয়া পুলিশসহ অপরাপর ২ বিবাদীর বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের সহকারী জজ নবীগঞ্জ-এর আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার স্বত্ব মামলা দায়ের করেছেন। ফলে সালিশ বোর্ডের দেয়া ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে ঘরের টিন খোলা ও চাবি হস্তান্তরের বিষয়টি এখন আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে অবস্থিত শাহ জালাল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মরহুম শেখ মনর মিয়া ১৯৬৮ সালে খরিদাসূত্রে পাওয়া ১৬ শতাংশ ভূমির মাঝে ৫ শতাংশ ভূমিতে প্রায় ২৫ বছর পূর্বে পিলার দিয়ে গৃহ নির্মাণ করে হোটেল ব্যবসা চালু করেন। তার মৃত্যুর পর মরহুম শেখ মনর মিয়ার পুত্ররা হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্বিগ্নে। গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে মূল গৃহটি ঠিক রেখে ঘরের সংস্কার কাজ শুরু করেন মরহুম মনর মিয়ার পুত্র লন্ডন প্রবাসী শেখ স্বরাজ মিয়া। কাজের শেষ পর্যায়ে ঘরের চালে টিন লাগানোর সময় আনমনু গ্রামের আব্দুস সাহিদ ওরপে সাহিদ মিয়া তার লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে অন্যায় আব্দারের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে বাধা দেন। পরে এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক বসে। হোটেলের মালিক পরিবারের পক্ষে মরহুম শেখ মনর মিয়ার পুত্র গত শুক্রবার নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, সালিশ বৈঠক দীর্ঘ ২ মাস সময়ক্ষেপন করতে থাকায় সালিশগণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা প্রবাসী এবং প্রবাসে চলে যেতে হবে এ জন্য বর্ধিত সময় দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বিধায় তাদেরকে ক্ষমা এবং আইনানুগভাবে সহযোগিতার ও প্রয়্জোনে সাহিদ মিয়াকে আইনের মাধ্যমে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসেন। পরে তারা নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা ও হোটেল ব্যবসার যাতে ক্ষতি না হয় এ জন্য ঘরের চালে টিন লাগান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালিশ বোর্ড গত শনিবার নবীগঞ্জ নতুন বাজার মোড়ে এক প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে বলা হয়েছে ওই সময়সীমার মধ্যে ঘরের টিন খোলে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে চাবি সালিশের কাছে জমা দিতে হবে। অন্যথায় নবীগঞ্জ থানার ওসি ও এএসপি (উত্তর) সার্কেলের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এদিকে গতরাতে হোটেল মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে তাদেরকে হোটেল থেকে উচ্ছেদ করে হোটেল গৃহটি বেদখল করার জন্য সাহিদ মিয়া মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মালিক পরিবারের পক্ষে আমেরিকা প্রবাসী শেখ সাইদুর মিয়া জানান, সম্পত্তি রক্ষার জন্য তিনি হবিগঞ্জের সহকারী জজ নবীগঞ্জ আদালতে একটি স্বত্ব মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় সাহিদ মিয়া তার চাচাতো ভাই মুকিত মিয়াসহ নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলার সংবাদের কপি থানায় পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শেখ সাইদুর মিয়া। একদিকে সালিশ বোর্ড কর্তৃক বেধে দেয়া ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম অপরদিকে হোটেলের মালিক পরিবার কর্তৃক আদালতে স্বত্ব মামলা দায়েরের কারনে বেকায়দায় পড়েছে পুলিশ। সালিশ বোর্ডের দেয়া ২৪ ঘন্টার মধ্যে হোটেল গৃহের টিন খোলে চাবি সালিশের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে ফোনে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, পুলিশ আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো ঘরের টিন খোলে ও চাবি উদ্ধার করে কোথাও জমা দেয়ার এখতিয়ার রাখেনা। এ ছাড়া ঘটনার রাতের উদ্বৃতি দিয়ে অফিসার ইনচার্জ বলেন, ওই রাতে কে বা কারা প্রবাসী শেখ সাইদুরদের পক্ষে কাজ করেছে তা অনেকেরই জানা। তিনি বলেন, পুলিশ সংঘর্ষ সামাল দিতে গিয়ে উভয় পক্ষের ৩ জনকে আটক করে কোর্টে সোপর্দ করেছে। তিনি আরো বলেন, সাহিদ মিয়াকে পরদিন ১২টার পর হবিগঞ্জে চালান করার আগ পর্যন্ত কোন নেতা-কর্মি থানায় খবর নেননি। এদিকে আমেরিকা প্রবাসী শেখ সাইদুর মিয়া জানিয়েছেন, একদিন যারা সাহিদ মিয়াকে ভূমিদস্যুতা মামলার আসামী দিয়ে জেল খাটিয়েছেন সেসব লোকের মুখে সাহিদ মিয়ার গুনগান শোনে তিনি ও তার পরিবার বিষ্মিত। শেখ সাইদুর আরো বলেন থানায় তথ্য নিয়ে জানা গেছে বিভিন্ন অপরাধে একাদিক মামলা রয়েছে সাহিদ মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও শহরের অভয়নগরে আরমান উল্লা ইসলামী একাডেমির ভূমি নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন অন্যের ভূমি জবর দখল করে জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের ভূমি প্রকৃত পক্ষে সাহিদ মিয়ার নয়। যদি সাহিদ মিয়ারই ভূমি থাকতো তাহলে এক মহিলা স্কুলের জায়গা দখল করেন কি ভাবে? শেখ সাইদুর জানান, হাট নবীগঞ্জ মৌজার ২১৭ দাগে সাহিদ মিয়ার পিতা ও চাচাদের ২ একর ৬৪ শতাংশ ভূমি ছিল কিন্তু ওই দাগের ৫ একর ৫২ শতাংশ ভূমি সাহিদ মিয়ার পরিবার বিক্রি করে দেয়ার পরও তাদের আরো ভূমি থেকেই যায়। এটা অত্যন্ত আর্শ্চযের বিষয়। প্রবাসী শেখ সাইদুর ও তার পরিবার আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থা ও এলাকার সুশিল সমাজের সহযোগিতা চেয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর