রাকিল হোসেন ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রইছগঞ্জ বাজার প্রকাশ (খাগাউড়া) সংলগ্ন এক প্রভাবশালীর বিলাশ বহুল বাড়িতে ১ সন্তানের জননীকে গত শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে পাষন্ড স্বামী ও তার লোকজন কর্তৃক স্ত্রীকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেহ ছাই করে দিয়েছে। নিহত হতভাগিনী রেফা বেগম (২০) এর সাথে কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে পারিবারিক পূর্ব বিরোধ চলে আসছিল বলে দাবী করেছে নিহতের ভাই হাবিবুর রহমান ও তার লোকজন। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম ও এ.এস.পি উত্তর সার্কেল নাজমূল ইসলামের নেতৃত্বে ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক স্বামী লোকমান মিয়ার পুত্র রায়হান (২৫), তার সৎ মা আছিয়া বেগম (৫৫), তার পুত্র আছাদ মিয়া (৩০) মেয়ে হেলেনা বেগম (২৬)কে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরন করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। নির্মম এই হত্যাকান্ডের ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় চলছে শোকের মাতম, হাজার হাজার জনতা ওই বাড়িতে ভীড় জমান। উপস্থিত শোকার্ত উত্তেজিত জনতা গৃহ বধু রেফা হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘাতকদের ফাসিঁ দাবী করেন। নিহত রেফা বেগমের প্রায় ৪বছর পূর্বে বিবাহ হয়েছিল একই গ্রামে তারই আপন চাচাতো ভাই রায়হান মিয়ার নিকট। তাদের দাম্পত্য জীবনে আড়াই বছর বয়সী আরমান মিয়া নামের এক অবুঝ শিশুও রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে জানাযায়, উপজেলার ওই গ্রামের কুখ্যাত জুয়ারী লোকমান মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়া তার চাচা মৃত গেদন মিয়ার কন্যা রেফা বেগমকে বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে মাঝে মধ্যে বাকবিতন্ডা ও ঝগড়া হতো। এমনকি পরিবার নিয়ে সিলেট শহরেও বাসা বাড়িতে বসবাস করতো ওই পরিবার। গত ৪মাস পূর্বে ঘাতক স্বামী রায়হানের সৎ বোন মৌসুমী নামের যুবতির বিবাহ হয় বাহুবল উপজেলার চারগাও গ্রামে। ওই বিয়ের সময়ে নানা কৌশলে তার সৎ মা পুলিশের হাতে ধৃত আছিয়া বেগম অর্ধ ভরি স্বর্ণালংকার আত্মসাত করেন। এর প্রতিবাদ করেছিল গৃহবধু রেফা বেগম। প্রতিবাদই তার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। সিলেট থেকে মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ি মাহমুদা মঞ্জিলে আসলে রেফা বেগম তার ভাই হাবিবুর রহমান ও পরিবারের অন্যদের কাছে বিষয়টি অবগত করতো। নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এই সর্ম্পক ঘনিষ্টতা হওয়ায় তেমন গুরুত্বও এই অভিযোগকে দেওয়া হতো না। তারা রেফাকে ঘর সংসার করার জন্য প্রায় সময়ই শান্তনা দিতেন। কিন্তু কে জানে নিজের ঘরেই বিষধর সাপের ভয়াল ছোবল, শিশু আরমানের বুক থেকে তার মাকে গভীর রাতে কেড়ে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন শেষে তাকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করে ঘাতকরা দাবী করছেন নিহতের পরিবার। লাশের মাথার পিছনে অস্ত্রের আঘাতে রক্তরন ও তেতলে যাওয়ার চিহৃ রয়েছে। এমনকি তার মূখ বাধাঁ অবস্থায় ও ফ্যানের সাথে ঝুলানোর চিহৃও দেখা যায়। পাশের রোমে বাথরোমের বেসিনে দেখা যায় তাকে জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত কেরোসিনের বোতল ও নানা আলামত পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে জানাগেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে তার স্বামী ও তার লোকেরা। তবে সুষ্ট তদন্তেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। অপরাধী যেই হোক আইনের আওতায় এনে তার বিচার করা হবে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, এ.এস.পি উত্তর সার্কেল নাজমূল ইসলাম, নবীগঞ্জ থানার ও.সি লিয়াকত আলী, ইউ.পি চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের শতাধিক নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আটককৃত ৪জনের বিরুদ্ধে নিহতের ভাই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।