,

আর্কিটেকচারের অন্দর বাহির

সময় ডেস্ক ॥ আর্কিটেকচারকে বলা হয় মাস্টার অব অল আর্টস। যেখানে সমন্বয় ঘটেছে কলা ও বিজ্ঞানের। মোটামুটিভাবে সব প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয় একজন স্থপতির। সেইসঙ্গে আর কী কী জ্ঞান থাকতে হয় স্থপতির? তাসবীর শাতিল নামের এক তরুণ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘স্টুডিও চলাকালীন সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, জীবনের প্যারার দিনগুলোতে সে নিজস্ব প্যারা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে দেয় না।’ শাতিল আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী। তার এই ‘প্যারা’ শব্দটি কষ্ট অর্থে ব্যবহৃত। দিনরাত খেটে যখন কোনো ভবনের নকশা তৈরি করতে হয় শাতিলদের ভাষায় তখন সময়টা ‘প্যারাময়’ হয়ে ওঠে। ‘তবে সে সময় আমরা যা তৈরি করি তা আমাদের প্রশান্তি দেয়’, বলেন শাতিল। এ দলে আরও আছেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষার্থী জামিমা খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যলয়ের মুয়াজ, শান্ত-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড টেকনোলজির আনন্দ। তাদের সঙ্গে কথা হয় স্থাপত্যবিদ্যার আগাগোড়া নিয়ে। এরাই জানান আর্কিটেকচারকে বলা হয় মাস্টার অব অল আর্টস। আবার আর্কিটেকচারেই সমন্বয় আছে বিজ্ঞান ও কলার। ‘যেমন ধরুন একজন শিল্পী যখন ছবি আঁকেন তিনি চাইলে তার ছবির মানুষটি কিংবা বাড়িটি মূল মানুষটি থেকে ২০ গুণ বড় করতে পারেন কিংবা একটি হাত বড়-ছোট করতে পারেন তার ছবির প্রয়োজন অনুযায়ী। কিন্তু একজন আর্কিটেকক্ট যখন ছবি আঁকেন তখন তিনি সবকিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ছবিটি আকেন’, বলেন শাতিল। ‘ভবনের ছবি (নকশা) এঁকেইে তো ক্ষ্যান্ত দেয়া যায় না। এর ব্যবচ্ছেদও করে দেখাতে হয় সেই ভবন মধ্যে কী কী আছে, কতটুকু জায়গা আছে। আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থাটা কেমন’, বলেন মুয়াজ। এ তো গেল কলার পাঠ। বিজ্ঞানের পাঠ নিয়ে কথা বলেন আনন্দ। তিনি বলেন, ‘মোটামুঠিভাবে সব টেকনোলজি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হয়। যেমন ধরুন পুরকৌশলের জ্ঞান থাকতে হয়, স্ট্রাকচারের ডিজাইন করার জন্য আবার ইলেকট্রিক্যালের জ্ঞান থাকতে হয় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার জন্য। এভাবে মোটামুটি সব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়।’ ‘আপনি হয়তো জানেন না, আমদের পেইন্টিংস, ফটোগ্রাফি, মিউজিক এসব বিষয় সাবসিডিয়ারিতে পড়তে হয়,’ যুক্ত করেন মুয়াজ। এ বিষয়ে পড়াশোনাটা উপভোগ করেন জামিমা। তবে ‘কারও আগ্রহ না থাকলে এ বিষয়ে পড়তে না আসাটাই ভালো’থ বলেন জামিমা। এর কারণও উল্লেখ করেন তিনি। জামিমা বলেন, ‘আমরা যারা পড়ি তারা একটা বিশেষ আগ্রহের জায়গা থেকে পড়ছি। আমার নিজের কথাই বলি, আমার নতুন কিছু তৈরি করার ইচ্ছা থেকে আর্কিটেকচার পড়তে আসা। কিন্তু সেটা করতে হলে বা করতে গিয়ে প্রচুর খাটতে হয়। এ খাটুনি করার মানসিকতা থাকতে হবে।’ পড়ুয়াদের কথা গেল। এবার আসা যাক কর্মজীবীদের কথায়। যারা পড়ছেন স্থাপত্যবিদ্যায়, কাজ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিংবা নিজেই গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠান। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে পড়ান ঈসা আবরার। তার মতে, ‘একজন শিক্ষার্থীর কাজের অনেকগুলো দিক খুলে দেয় আর্কিটেকচার। যেমন এখানে ফটোগ্রাফি শিখতে হয়, তেমনি পড়তে হয় অঙ্কন বিষয় নিয়ে, সঙ্গে সঙ্গীত নিয়েও পড়তে হয়। ফলে অনেকগুলো দিক খুলে যায়। আবার এসব জানার ফলে সমাজকে ভিন্নভাবে দেখার চোখ তৈরি হয়। আর সৃষ্টির আনন্দ তো আছেই।’ এ সৃষ্টির কথা বলেন আহসানুল হকও। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে পড়া শেষ করে গড়ে তুলেছেন ‘কেটুএইচ প্লাস আর্কিসেক্টস’ নামের প্রতিষ্ঠান। তার মতে, ‘একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবনে যা শেখে তার চেয়ে বেশি শেখে কাজের ক্ষেত্রে। আর এ পুরো শেখার ও কাজের সময়টা উপভোগ্য। কারণ আমরা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু তৈরি করার জন্য ছুটে চলেছি। তাই আমাদের সময়টা ভালো কাটে বলতেই হবে।’ এ উপভোগের কারণগুলো আরও বিস্তারিত বলেন শওকত রাব্বী চৌধুরী। কাজ করছেন ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেডে। ‘এই যে আমার পড়ালেখা করি, সেখানে শুরুতে শেখানো হয় অঙ্কন, এরপর আসে ভবনের নকশা, ক্রমান্বয়ে নগরের নকশা, শেষে থিসিস। আর এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী প্রচুর গান শুনবে ও এ নিয়ে পড়াশোনা করবে তার কাজের প্রয়োজনে। এতেই শেষ নয়, তাকে প্রচুর সিনেমাও দেখতে হবে। তাই আমরা বলি আর্কিটেক্টরা নিজের সময়টাকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতে পারে।’


     এই বিভাগের আরো খবর