,

পুরুষশূণ্য গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ॥ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার মাধবপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় ১৩ দাঙ্গাবাজ মহিলাকে কারাগারে প্রেরণ

মাধবপুর প্রতিনিধি ॥ মাধবপুর উপজেলার জগদিশপুর ইউনিয়নের খাটুরা গ্রামে জোড়া খুনের ঘটনায় আটক ১৩ দাঙ্গাবাজ মহিলাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে বুধবার ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। আটক ১৩ মহিলা হল ঃ হামিদা (৪৫), রাফিয়া বেগম (২৫), পিয়ারা (৩৭), হেলেনা (২২), মাহিনুর (৪০), হালিমা (৩২), তাছলিমা (৩২) তাকমিনা (৩০), রাফিয়া খাতুন (৪৫), ফাতেমা (২২), সাবিনা (৫০), অনুপা (৪৫) ও মরজিনা (২৫)। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাটুরা গ্রামের ইউপি মেম্বার খলিলুর রহমান ছুট্রো মিয়ার সাথে একই গ্রামের ফজল মিয়ার গোষ্ঠিগত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই জের ধরে গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংষর্ষ চলাকালে অস্ত্রের আঘাতে ওই গ্রামের রহিছ আলীর কন্যা রুকেয়া বেগম খুন হয়। সংঘর্ষে আহত অবস্থায় একই গ্রামের সাজু মিয়ার পুত্র জলিল মিয়াকে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঘাটুরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কোন বাড়িতে পুরুষ লোক নেই। অধিকাংশ বাড়ি তালাবদ্ধ। নিহত রুকেয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত মা কুলসুমা বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। রুকেয়ার মা বলেন, এক বছর আগে রুকেয়াকে পাশ্ববর্তী বরগ গ্রামে সুজন নামের এক যুবকের নিকট বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু স্বামী নির্যাতন করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর স্বামী পরিত্যাক্তা রোকেয়া তার ৫ সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালাত। বুধবার সন্ধ্যায় ইউপি মেম্বার ছুট্রো মিয়ার লোকজন তার মামা ও নানার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছে সংবাদ শুনে স্থানীয় কবরস্থানের নিকট গেলে ছুট্রো মিয়ার লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে হত্যা করে। একই গ্রামের নিহত জলিলের বাড়িতে গেলে জলিলের বোন রতœা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব বিরোধের জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়ার ভাগিনা ফজল মিয়ার লোকজন সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করে। এসময় ছেলেকে রক্ষা করতে মা মরিয়ম বেগম এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাকেও আঘাত করে। জলিল গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জলিলের মা মরিয়ম ও স্ত্রী লাশ নিয়ে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে থাকায় তাদেরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পাশ্ববর্তী গ্রামের লোকজন জানান, খাটুরা গ্রাম একটি কলহপ্রিয় গ্রাম। এ গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নারী-পুরুষ শিশুরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সংঘর্ষে গত দুই দশকে অন্তত ৮ জন খুন হয়েছে। তাদের মধ্যে বারেক মিয়া, সিরাজ মিয়া, রহমত আলীর পুত্র অন্যতম। সর্বশেষ রোকেয়া ও জলিল মিয়া খুন হল। জোড়া খুনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। খাটুরা গ্রামে নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লা মনির হোসেন জানান, উত্তেজিত অবস্থায় ১৩ নারীকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি বলে ওসি জানান। এদিকে ময়ানতদন্ত শেষে গতকাল বিকালে লাশ দুইটি পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর