,

নবীগঞ্জে রমরমা কোচিং বাণিজ্য! : নীতিমালা কি শুধু কাগজেই?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার সর্বত্র চলছে রমরমা কোচিং বানিজ্য। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামাঞ্চলের স্কুল-কলেজ পড়–য়া একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক বিষয়ে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে হয় আর শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থীকে করতে হয় কোচিং। তবে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই প্রাইভেট ও কোচিং-বাণিজ্যের সাথে জড়িত শিক্ষকেরা। ২০১২ সালে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা’ জারি করা হয়। কিন্তু কাগজে এ নীতিমালা থাকলেও নবীগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র। নবীগঞ্জ শহরেই অসংখ্য শিক্ষক নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রাইভেট-কোচিং পড়াচ্ছেন। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও নোট-গাইডকে প্রধান অবলম্বন করে নিয়েছেন। ফলে সরকার নিষিদ্ধ করার পরও বাড়ছে নোট-গাইড বই বাণিজ্য। বাড়ছে প্রাইভেট-কোচিংয়ের তাগাদা। সম্প্রতি নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাইভেট-কোচিং নিষিদ্ধ করার পরও নবীগঞ্জে থামেনি প্রাইভেট বা কোচিংয়ে পড়ানোর প্রবণতা। নবীগঞ্জের বিভিন্ন হাই স্কুলের শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেপরোয়ার মতো কোচিং বাণিজ্য করছেন নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকরা। কলেজ শিক্ষকরা অবৈধভাবে কোচিং বাণিজ্য করে বাধাগ্রস্থ করছেন সুনাম অর্জনকারী এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের। তারা সরকারের নীতিমালা লংঘন করে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেপরোয়া প্রাইভেট কোচিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যদিও নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিং বেআইনী। তারপরও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের কিছু অসাধু শিক্ষক ক্লাশের পূর্বে ও পরে, শহরের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে কোচিং সেন্টার খোলে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে শিক্ষকের খাচায় বন্ধি হয়ে আছেন কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা। বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ- শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে। নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭-এ উল্লেখ আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং-বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রচারণা ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। অনুচ্ছেদ ১৪-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা আছে, এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্থ, চূড়ান্ত বরখাস্থ ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখিত বিধিসমূহ সদয় জ্ঞাতার্থে ও কাযার্থে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ ২৪টি স্থরে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নীতিমালা বাস্তবায়নে। এ নীতিমালা কিছুদিন হইচই ফেলেছিল। শিক্ষা ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ঘাপটি মেরে ছিল। এরপর আর তেমনভাবে নিয়ম পালিত হচ্ছে না। সব আগের মতোই চলছে। অথচ সরকার নির্বিকার। জানা গেছে, কোচিং-ব্যবসায়ী শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তা আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন উঠেছে, আইনের প্রয়োগ না হলে আইন করার দরকার কী? এ কি শুধুই লোক দেখানো? শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালাটিও দেশের বিবেকবান ও সচেতন মহলকে আলোড়িত করেছিল। ভুক্তভোগীরা ভেবেছিলেন এবার অন্তত শিক্ষক নামধারী কিছুসংখ্যক শিক্ষা ব্যবসায়ীর লাগাম ধরা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা চলছে সেই আগের মতোই।


     এই বিভাগের আরো খবর