,

ট্রাম্পের বিস্ময়কর জয়

সময় ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে গতকাল সকাল থেকেই টিভি স্ক্রিনে প্রচার হতে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল। তখন সে দেশে রাত। চলছে ভোট গণনা। একের পর এক আসছে ফল। চলছে উৎসবমুখর ‘ইলেকশন নাইট’। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব গণমাধ্যমের জরিপে প্রচার হচ্ছে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নিশ্চিত জয়ের আভাস। ফল প্রচারের শুরুর দিকে কিছুক্ষণ এগিয়েও ছিলেন তিনি। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরই হিলারিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনো বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জরিপগুলোর ফলগুলো রীতিমতো হিলারির পক্ষে গ্যারান্টি দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হিলারি আর একবারের জন্যও পেছনে ফেলতে পারেননি ট্রাম্পকে। না সেটা ইলেকটোরাল ভোটে, না পপুলার ভোটে। হিলারির দল পারেনি কংগ্রেসের (মার্কিন সংসদ) কোনো কক্ষেই। সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ উভয় ক্ষেত্রেই একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্টের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারাভিযান জুড়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী ঘৃণা কুড়ানো ট্রাম্পকে বলা হচ্ছিল ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। এমন ‘পাগলাটে’ ব্যক্তিকে যে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন এমনটা ভাবতেই পারেননি ঝানু নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরাও। সব জরিপ ও বিশ্লেষণ উল্টে দিয়ে ট্রাম্পের এ চমকপূর্ণ জয়ে তাই বিস্মিত বিশ্বের খ্যাতনামা রাজনীতিকরাও। মাত্র দেড় বছর আগে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে রাজনীতিতে আসা ট্রাম্প যেভাবে রাজনৈতিক রীতিনীতি দুমড়ে মুচড়ে দিলেন তাতে সবাই হতবাক। বলতে গেলে, ট্রাম্প এখন পরিণত হয়েছেন এক বিস্ময়ে। ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এ বিস্ময়মূলক প্রতিক্রিয়া ফুটে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া আফ্রিকার গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন সংস্করণগুলোতে। বিবিসি বলছে, ট্রাম্প মূলত তার পাঁচ কৌশলের কারণে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং এর কোনো কৌশলই অন্যরা ধরতে পারেনি। বিজয়োত্তর ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন তিনি হবেন সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, এবং তা হওয়াই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন নির্বাচনী সংস্থার তথ্যমতে, আগামী চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে প্রায় ২২ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোটার নিজেদের ভোট প্রদান করেছেন। প্রেসিডেন্ট পদ নিশ্চিত করতে এ নির্বাচনে ৫০ রাজ্যে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে প্রয়োজন ছিল ২৭০ ভোট। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ঘোষিত ফলাফলে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮৯টি ইলেকটোরাল ভোট। আর হিলারি পেয়েছেন ২১৮টি ইলেকটোরাল ভোট। জনপ্রিয়তার হিসাব কষা পপুলার ভোটের ক্ষেত্রেও এগিয়ে গেছেন ট্রাম্প। তিনি পেয়েছেন ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ৬১৪ ভোট অর্থাৎ মোট ভোটের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ। হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ৫ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার ৯০৩ ভোট। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়াও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সব কটিতে ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৪ আসনে নির্বাচন হয়। সেখানেও আধিপত্য রিপাবলিকানদের। প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে যেখানে প্রয়োজন ২১৮টি আসন সেখানে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানরা পেয়েছে ২৩৫টি আসন, হিলারি দল ডেমোক্রেটরা পেয়েছে ১৯১ আসন। আর সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫১ আসন পেয়েছে। এখানে ডেমোক্রেটরা পেয়েছে ৪৭ আসন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর প্রচারিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, সব জরিপে এগিয়ে থাকায় হিলারির প্রচারণা সদর দফতর ভোট চলার সময় সারাক্ষণই ছিল উৎসবমুখর। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের আগেই পরাজয় বুঝতে পেরে হিলারির সমর্থকরা মুষড়ে পড়ে। কান্নায়ও ভেঙে পড়েন অনেকে। রাতে কথা বলেননি হিলারি ক্লিনটন নিজেও। অবশ্য ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামে যাওয়ার আগে হিলারি ফোনে অভিনন্দন জানান বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ট্রাম্পও অভিনন্দন জানান হিলারিকে ‘অত্যন্ত কঠিন এক নির্বাচনী লড়াই চালানোর জন্য’। জানা যায়, ট্রাম্পের জয়ের চমকের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে। হতবাক হয়ে যাওয়া বিশ্ব পুঁজিবারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয় শঙ্কা। শুরু হয় ব্যাপক দরপতন। বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জগুলো হয় নিম্নমুখী। এই অস্থিরতা হয় দীর্ঘ। কারণ হিলারি ক্লিনটন জয়ী হচ্ছেন এমন আভাসে নির্বাচনের আগে আগে চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের বাজারগুলো। চমকের ধকল কাটিয়ে উঠতে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান তার শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছে জরুরি বৈঠকে।


     এই বিভাগের আরো খবর