,

পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

সময় ডেস্ক ॥ দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটে জনদুর্ভোগের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এই কার্যকরী সভাপতি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি ‘আইনগতভাবে’ সমাধানের জন্য অগ্রসর হবেন তারা। এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে মতিঝিলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান নৌ-মন্ত্রী। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরিবহন মালিক শ্রমিকদের যানবাহন চলাচল শুরুর আহ্বান জানান এবং তার পরপরই ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলতে শুরু করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাও উপস্থিত ছিলেন। মসিউর রহমান রাঙ্গা বাস ও ট্রাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি। ধর্মঘটের বিষয়টি কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ছিল না এবং রায়ের খবরে ক্ষুব্ধ চালকরা ‘নিজেরাই’ গাড়ি চালানো থেকে বিরত ছিলেন দাবি করে শাজাহান খান বলেন, স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এ অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় গত মাসের শেষ দিকে জামির হোসেন নামের এক বাস চালকের যাবজ্জীবন সাজার রায়ের প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘট। সোমবার দুপুরে প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও ওইদিন সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে মীর হোসেন নামের এক চালকের ফাঁসির রায় হলে পরিবহন শ্রমিক নেতারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচি দেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে সেই ধর্মঘটে সারা দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। চিকিৎসাসহ জরুরি প্রয়োজনে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে না পেরে বিপাকে পড়ে বহু মানুষ। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাজাহান খান বলেন, দেশে সড়ক পরিবহন খাতে ‘চলমান অচলাবস্থা সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়েছে এবং সে বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকদের বক্তব্য স্পষ্ট করা দরকার বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপনারা জানেন যে, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জ মহাসড়কে এক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর নিহত হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিলাম। আমরা আজও বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো মৃত্যু কারও কাম্য নয়, আমাদেরও নয়। ওই মামলায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের চালকের যাবজ্জীবন সাজার পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে নৌমন্ত্রী বলেন, সোমবার মালিক-শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক চলাকালেই ঢাকার আদালতে ট্রাক চালককে ফাঁসির রায়ের খবর আসে। ওই সংবাদ দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলার মালিক ও শ্রমিক নেতারা আমাদেরকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর জানাতে থাকে। তখন বিষয়টি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় উক্ত সভায় গাড়ি চালানোর গৃহিত সিদ্ধান্ত ভন্ডুল হয়ে যায়। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কভার্ডভ্যান মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জনদুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, সড়ক পরিবহনের এ অচলাবস্থাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে এবং সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। দুর্ঘটনার কারণে ফাঁসি বা যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার আশঙ্কায় পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলেও মন্তব্য করেন এই শ্রমিক নেতা।


     এই বিভাগের আরো খবর