,

হবিগঞ্জে ভোগান্তির শিকার বৃদ্ধরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় বয়স্ক ভাতা নিতে আসা বৃদ্ধদের প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বয়স্ক ভাতা উত্তোলনকারীদের। গতকাল বুধবার বেলা ১২টায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। বয়স্ক ভাতা নিতে আসা মোহনপুর এলাকার আয়মন খাতুন বলেন, “৩ মাস পরে পরে ১৫শ’ টাকা দেয়। প্রত্যেক বার ঐ এক অবস্থা। ব্যাংক থেইক্কা ট্যাকা নিতে সারাদিন লাগে।” ইনাতাবাদ এলাকার সালেমা খাতুন বলেন, “ব্যাংকের দরজা খোলার আগেই আইয়া বইয়া রইছি । ১২টা বাজে এখন পর্যন্ত ট্যাকা (টাকা) দিছে না।” ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে বাতির পুরের সুজলা রায়, তেগরিয়া থেকে আসা মালেকা খাতুন, রাজনগরের জরিনা খাতুন ও ইংরাজ বিবিসহ বেশিরভাগ বৃদ্ধাই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েন ময়লা ও ধুলাবালিযুক্ত মেঝেতে। মেঝেতে বসা জরিনা খাতুন বলেন, “ভাতার যে ট্যাকা পাই ইতা পাওয়ের তলে ঐ যায়গা (ভাতার টাকা পায়ের চিকিৎসা করতেই ব্যয় হয়)। তাও আবার এক মাসের ট্যাকা আরেক মাসে দেয়।” জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসের ভাতা দেয়া হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। ২২ মার্চ ২০১৭ তে দেয়া হচ্ছে ২০১৬ সালের অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর মাসের ভাতা। ব্যাংকের নিচ তলায় দেখা যায়, ভাতা উত্তোলনকারী শতাধিক নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড় ব্যাংকের ভিতর থেকে দরজার সামনে পর্যন্ত পৌছায়। ভাতা গ্রহণকারী বৃদ্ধরা অভিযোগ করে জানান, কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অলসতার জন্য টাকা দিতে দেরি হয়। তাদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, সকালে এসে ভাতার বই জমা দেন নির্ধারিত ডেস্কে। বইয়ের সারি বৃদ্ধি পেলেও নির্ধারিত সময়ে টাকা দেয়া শুরু করে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘড়ির কাটা ১২টা থেকে ১২টা ৩০ এ আসলেও ভাতা প্রদানের নির্ধারিত ডেস্কে নেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ১২.৩৫ মিনিটে প্রথম ভাতা গ্রহীতা মো. ইব্রাহীমের ডাক পরলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ইলিয়াস উদ্দিনের নাম ডাকা হলে তাকে ও পাওয়া যায় না। সকাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে অনেকেই বহিরে চলে গেছেন জানান আশেপাশের তাদের পরিচিতজনরা। এরপরই ডাক পরে রাজনগরের আঙ্গুরা খাতুনের। নিজের নাম শুনেই ‘হাজির হাজির’ বলে ভিড় ঠেলে সামনে আসেন আঙ্গুরা খাতুন। ভাতার টাকা গ্রহণ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি। হবিগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক হাছান আহমেদ মঈন বলেন, ভাতা প্রদান কয়েকটা প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে হয়। বই জমা নেয়ার পর খাতায় এন্ট্রি করে ডেবিট করে পেমেন্ট দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্য ৪ জন স্টাফ প্রয়োজন কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ১জন স্টাফ দিয়ে ৪ জনের কাজ করাতে হচ্ছে। তাই কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভাতা গ্রহণকারীদের। এখন আমাদের ও কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। প্রতিষ্ঠানে যে জনবল আছে এর ভিতরেই সব সেক্টর ম্যানেজ করতে হয়। উল্লেখ্য, দুস্থ, দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত ও সাধারণ মানুষের জন্য বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যে একটি বয়স্কদের ভাতা ব্যবস্থা। ওই সকল দুস্থ অসহায় মানুষ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পরনির্ভরশীল যাতে না হতে হয় একটু ভাল থাকতে পারে, সে লক্ষ্যেই সরকার বয়স্কভাতা ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু ভাতাভোগীরা ভাতা তুলতে এসে শিকার হচ্ছেন নানা ধরণের বিড়ম্বনায়। ভাতাভোগীদের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় অনেকের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক থাকে।


     এই বিভাগের আরো খবর