,

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত : গজনাইপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ পুলিশী হেফাজতে

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ ৭১’সালে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তঃত ২০ নিরীহ স্বাধীনতাকামী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা, ধর্ষন, অপহরণ ও বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নবীগঞ্জের রাজাকার আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ এখন পুলিশ হেফাজতে। সোমবার দুপুরে জেলার নবীগঞ্জস্থ নিজ বাড়ী থেকে গোলাপকে আটক করে নিয়ে আসে পুলিশ। তাকে এখন রাখা হয়েছে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ডিবি কার্যালয়ে। এদিকে গোলাপকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও কৌশলগত কারনে পুলিশ এ নিয়ে মুখ না খোলায় তাকে কেন পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র ঘোরপাক খাচ্ছে। তবে পুলিশসহ আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার একটি সূত্র অনেকটাই নিশ্চিত করে বলেছে, ৭১’সালে নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে ওই ব্যক্তির সর্ম্পৃক্ততার বিষয় নিয়ে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা এএসপি নুর হোসেনের নের্তৃত্বে একটি টীম একাধিকবার মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করার পর তার প্রাথমিক প্রমান মেলে। যে কারনে তাকে যে কোন সময় আটক করা হতে পারে এমন শংকায় ছিলেন গোলাপ। আর এমন খবর নানা উপায়ে জানতে পেরে গোলাপ দেশ ত্যাগের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে তাদের হেফাজতে নিয়ে আসে। সূত্র আরও জানায়, গোলাপকে কেন পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে, তা আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাতে পারে হবিগঞ্জ পুলিশ। এ বিষয়ে ওই তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি নুর হোসেন বলেন, গোলাপের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলছে। তাকে তুলে আনার বিষয়টি তিনি জানেন। কি কারনে আনা হয়েছে হয়তো ২/১ দিনের মধ্যেই পরিস্কার করতে পারবে পুলিশ। এদিকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান গোলাপকে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে আসার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধসহ নানাবিধ অভিযোগ থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। কিছু কৌশলগত বিষয় রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০/১১টার পর গোলাপের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে পুলিশ। বলাবাহুল্য, ৭১’সালে সুন্দরী রমনীদের জোর পূর্বক উঠিয়ে পাক সেনা ক্যাম্পে সরবরাহকারী হিসেবে সংশ্লিস্ট এলাকায় পরিচিত এই গোলাপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন জনৈক গেদু মিয়া। কিন্তু তারপরপরই এই মামলার বাদী আকস্মিক বাস চাপায় নিহত হন। পরবর্তীতে গোলাপের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার নিকট জনৈক সুককরী বেগমসহ আরও ২/১ জন একাধিক অভিযোগ দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে সংশ্লিস্ট ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আইজিপি আব্দুল হান্নান খান পিপিএমএ’র নির্দেশে গোলাপের অপর্কমের সন্ধানে মাঠে নামেন এএসপি নুর হোসেনের নের্তৃত্বে ওই টীম। উল্লেখ্য, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপ নৌকা প্রতীক পেয়ে আওয়ামীলীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। তবে তার বিরুদ্ধে ৭১’সালে ওই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এমন সংবাদ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হলে কেন্দ্রীয়ভাবে তাৎক্ষনিক তার মনোনয়ন বাতিল হয়। তবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে গোলাপ আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে ওই নির্বাচন করলেও আওয়ামীলীগ সমর্থিত নতুন প্রার্থী ইমদাদুর রহমান মুকুলের কাছে তিনি ধরাশায়ী হন।


     এই বিভাগের আরো খবর