,

ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে অবশেষে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গোলাপ গ্রেফতার

রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন ॥ গজনাইপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে আর্ন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত সংস্থা কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি নুর হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ঠ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নের্তৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মোঃ সাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরোওয়ার্দি। এদিকে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ওই আদেশের কপি একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে ফ্যাক্স যোগে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার নিকট পৌছুলে গোলাপকে আনুষ্ঠানিক গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এর আগের দিন সোমবার বিকেলে উপজেলার কায়স্থগ্রামের নিজ বাড়ী থেকে তাকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাকে রাখা হয় হবিগঞ্জ পুলিশ কার্যালয়ের ডিবি শাখায়। সেখানেই দিন পেরিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত গোলাপকে ৭১’সালে তার কর্তৃক সংঘটিত নানা অপকর্ম এবং আরও কয়েকটি সাম্প্রতিক ঘটনায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, এসময় প্রশ্নবানে জর্জরিত গোলাপ অনেকটাই কপোকাত হয়ে পড়েন। তবে গোলাপকে নিয়ে আসার নেপথ্য কারণ কি, মিডিয়াকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ ছিল অকেটাই নিরব। শুধু একটি কথাই পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল যে, ৭১’এ সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত কিছু বিষয় সহ আরও কিছু অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে গোলাপকে নিয়ে এসেছে পুলিশ। তবে তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে এমন কিছু বলা যাবে না। এরই মধ্যে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ওই আদেশ আসায় গোলাপকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। বলাবাহুল্য, ৭১’সালে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্তত ২০ নিরীহ স্বাধীনতাকামী মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা, ধর্ষন, অপহরন ও বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ সহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে গোলাপের বিরুদ্ধে। ৭১’সালে সুন্দরী রমনীদের জোর পূর্বক উঠিয়ে পাক সেনা ক্যাম্পে সরবরাহকারী হিসেবে সংশ্লিষ্ঠ এলাকায় পরিচিত গোলাপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন গেদু মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তারপরপরই এই মামলার বাদী আকস্মিক বাস চাপায় নিহত হন। পরবর্তীতে গোলাপের বিরুদ্ধে আর্ন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার নিকট জনৈক শুক্করী বেগম সহ আরও ২/১ জন একাধিক অভিযোগ দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ঠ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আইজিপি আব্দুল হান্নান খান পিপিএমএ’র নির্দেশে গোলাপের অপর্কমের সন্ধানে মাঠে নামেন এএসপি নুর হোসেনের নেতৃত্বে ওই টীম। এসময় প্রতিটি তদন্তকালে এই টিমের সাথে ছিলেন, আর্ন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থা কর্তৃক গঠিত জেলা স্বাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির মেম্বার ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন। উল্লেখ্য, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ নৌকা প্রতীক পেয়ে আওয়ামীলীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। তবে তার বিরুদ্ধে ৭১’সালে ওই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এমন একটি সংবাদ দৈনিক জনকন্ঠে তাৎক্ষনিক প্রকাশ হলে কেন্দ্রীয়ভাবে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। তবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আবারও গোলাপ আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে ওই নির্বাচনের প্রার্থী হলেও আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীরীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলের কাছে তিনি পরাজিত হন।


     এই বিভাগের আরো খবর