,

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ত্রান বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী- হাওর রক্ষা বাঁধে দুর্নীতি প্রমাণ হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না

সময় ডেস্ক ॥ হাওরবাসীর পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী থাকি না থাকি আপনাদের পাশে থাকবো। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাওর রক্ষা বাঁধের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রমাণ হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন। বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগামীদিনে বাঁধ নির্মাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পকিল্পনার মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জসহ হাওর অঞ্চল পরিদর্শনকালে শাল্লায় আয়োজিত ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান ও সমাবেশে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, হাওর আমাদের সম্পদ, কৃষক আমাদের প্রাণ, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার কোনো সুযোগ নেই। আমিও হাওর-বাওড়ের সন্তান এমনকি সুনামগঞ্জ আর গোপালগঞ্জের নামের সঙ্গেও যথেষ্ট মিল রয়েছে। আগামী বোরো ফসল ঘরে না ওঠা পর্যন্ত অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকায় খাদ্য-সহায়তা দিয়ে যাবে সরকার। এরই মধ্যে ভিজিএফ, ভিজিডি, জিআরসহ ওএমএসের বরাদ্দ ও দ্বিগুন করা হয়েছে। হাওর এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণের সুদ মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। আগামী মৌসুম শুরুর আগেই প্রতিটি কৃষককে ঋণদান, বিনা মূল্যে বীজ, ইউরিয়া ও কীটনাশক প্রদানের মাধ্যমে ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকার কৃষিবান্ধব সরকার, আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই, দেশে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। ১৯৯৮ইং সালের বন্যার সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল কয়েক লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, কিন্তু আল্লাহর রহমত সে সময়েও কোনো লোক না খেয়ে মারা যায়নি। ইনশাআল্লাহ আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। ধানের পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা শুধু ধান চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না, অন্যান্য ফসলাদি চাষের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। হাওরাঞ্চলে মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা হাওর উন্নয়ন বোর্ড চালু করেছি। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে হাওর এলাকায় মাছ প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। নদী, নালা ও খাল খনন করার মাধ্যমে হাওরকে বাঁচাতে সরকার প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছে। প্রাকৃতিক অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের কাজ করতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের বাঁচতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা প্রহণ ও হাওর এলাকায় আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। চিকিৎসা ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব দিয়ে হাওর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। গতকাল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা সদরের সাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অকালবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ও ত্রাণ-ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও এলাকার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহিবুর রহমান মানিক এমপি, আব্দুল মজিদ খান এমপি, মোতাহার হোসেন মোল্লা এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, শাহানা রব্বানী এমপি, আওয়ামী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদর উদ্দিন কামরান, অধ্যাপক রফিকুর রহমান, আইয়ুব বখত জগলুল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, আতর আলী, অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, হাফিজুর রহমান তালুকদার, পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়াসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে তিনি সাহিদ আলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। পাশে নির্মিত মঞ্চ থেকে ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে উপজেলা সদর থেকে স্পিডবোটে বাহারা ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। বেলা পৌনে ২টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে শাল্লা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


     এই বিভাগের আরো খবর