,

নিউইয়র্কে নবীগঞ্জের এক ইমামসহ ২ জনকে হত্যা, অস্কার মুরালকে দোষী সাব্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগী তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় অস্কার মুরাল নামের এক যুবককে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। গত শুক্রবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নিউইয়র্কের কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বারো সদস্যের জুরি বোর্ড ও এক বিচারক চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামী মুরাল খুনী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। আলোচিত ওই জোড়া খুনের ঘটনায় আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজির দেশের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট নিউইয়র্কের ওজন পার্কে দুর্বৃত্তের গুলিত নিহত হন নিউইয়র্কের ওজনপার্কের ওজোনপার্কের আলফোরকান মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি (৫৫) ও তার সহযোগী মুসল্লী তারা মিয়া। স্থানীয় লিবার্টি এভিনিউ’র ৮০ স্ট্রিটে এই হত্যাকান্ড ঘটে। নিউইর্য়কের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ওজন পার্ক। প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস এই এলাকায়। এখানেই বাস করতেন আল ফোরকান মসজিদের নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি এবং বৃদ্ধ তাঁরা মিয়া। তাঁরা মিঞা, ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজির প্রতিবেশী ছিলেন এবং প্রতিদিন তারা দু’জনে একসঙ্গে মসজিদে যেতেন এবং নামাজ পড়তেন। ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকুনজির (৫৫) বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে ও মসুল্লী মরহুম মুহাম্মদ তারা মিয়ার (৬৪) বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গাহাটা গ্রামে। চার বছর ধরে ইমাম আকুনজি আল ফোরকান মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুক্তরাষ্টে”র ইতিহাসে কোন মুসলিম ইমাম হত্যার ঘটনা এটিই প্রথম। ঘটনার দিন দুপুরে জোহরের নামাজ আদায় শেষে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথেই নির্বিচারে গুলিবিদ্ধ করা হয় তাদের। ইমাম আকুনজি ঘটনাস্থলেই আর তারা মিয়া হাসপাতালে মারা যান। ঘটনার পর অস্কার মুরাল নামে একজনকে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের পর থেকেই হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবীতে বাংলাদেশী কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার ছিলেন। গত কয়েক সপ্তহ ধরে গুঞ্জন ছিল যে কোনো সময় হতে পারে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগি তারা মিয়া হত্যা মামলার রায় ঘিরে। বিশেষ করে গত তিন দিন ধরে নিউইয়কের” কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে টানা শুনানী চলছিল মামলাটির। ঘটনার বিবরণ, মামলার তদন্ত, আশেপাশের ভিডিও ফুটেজসহ সব কিছুই প্রমাণ করে অস্কার মুরালই ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়াকে গুলি করে পলিয়ে যায়। ঘটনার পরপর স্থানীয়রা আটকও করে অস্কার মুরালকে। কিন্তু আদালতে নিজে নিদোর্ষ দাবী করায় মামলাটির দীর্ঘ শুনানী হয় কোর্টে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা বিচার কাজ শুক্রবারের রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়। ঐ ঘটনায় প্রতিটি ধাপে আদালত স্প্যানিস যুবক অস্কার মুরালকে দোষী বলে রায় দেয়। রায়ে আদালত জানায়, মুরাল ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার। আর তার শাস্তিও হবে সর্বোচ্চ। আদালত আসামীকে গিল্টি হিসাবে ঘোষনা করলেও আগামী ১৭ এপ্রিল শাস্তি কি হবে তা ঘোষণার জন্য তারিখ ধার্য করেন। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঐ হত্যান্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারের সাথে সব সময় ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে, ন্যায় বিচার পাওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়ার পরিবার। এদিকে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত আলোচিত ঐ জোড়া খুনের ঘটনা ব্যাপক সারা ফেলে। ঘটনার পর থেকেই নিহতের পরিবারের পাশে ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। প্রতিটি শুনানীর দিন আদালতে তাদের অংশগ্রহন ছিল স্বতস্ফুর্ত। আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় কমিউনিটি’র পাশাপাশি ঐ ঘটনার বিচার ও দোষীকে খুজে বের করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথেও ছিল প্রবাসের বাংলাদেশী মিডিয়া। এ জন্য মিডিয়াকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।


     এই বিভাগের আরো খবর