,

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীরা অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার

সময় ডেস্ক :: সৌদি আরব অথবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীরা অবর্ণনীয় দুর্দশার শিকার। এর মধ্যে বেশির ভাগই যৌন নির্যাতনের শিকারে পরিণত হন। তাদেরকে দেয়া হয় না বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ। পান না ঠিকমতো বেতন। বেতন চাইলে প্রহৃত হতে হয়। এক কাজ দেয়ার কথা বলে নেয়ার পর দেয়া হয় অন্য কাজ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরত আসা অনেক বাংলাদেশী নারী এর আগে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। এবার টাইমস অব ইন্ডিয়া সেদেশের নারী গৃহকর্মীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছে, যারা সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এমন একজন নারী হলেন হায়দরাবাদের জয়নব বেগম। তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছিল গৃহকর্মের সহযোগী হিসেবে। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছার পর বুঝতে পেরেছেন জীবন কত কঠিন। প্রায় এক বছর আগে তিনি দেশে ফিরেছেন। সে সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জয়নব বলেছেন, আমি যদি বেতন চাইতাম বা বাড়িতে ফোন করার চেষ্টা করতাম তাহলেই তারা আমাকে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে বা তাদের হাতের কাছে যা পেতো তা দিয়ে আঘাত করতো। আমাকে হুমকি দিতো। যখন তাদের এ অত্যাচার সহ্য করতে পারতাম না তখন নিজের জীবন নিজেই বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছি।
বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে। তারপর তারা ভারত সরকারের কাছে আবেদন করে। ফলে রিয়াদে নিয়ুক্ত ভারতীয় দূতাবাস তাকে তার ভয়াবহ পরিণতি থেকে উদ্ধার করে। তার মেয়ে রুবিনা বলেছেন, এখনও আতঙ্ক কাটে নি তার মা জয়নবের।
সৌদি আরবে নিয়োগকারীদের হাতে একই রকম নির্যাতন ও অপমানের কথা বর্ণনা করেছেন আরো নারী। তাদের আরেকজন হলেন শাহিনগরের ইলিয়াস বেগম। একবার নিয়োগকারীর ছেলে তার কাছে যৌন সুবিধা দাবি করে। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় গৃহকর্তার ছেলে তাকে তৃতীয় তলা ভবন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নিচে। এতে তার পা ভেঙে যায়। ইলিয়াস বেগম বলেন, আমাকে ২০১৬ সালে দুবাইতে ভাল বেতনের একটি ভাল চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। রাজি হয়ে যাই। কিন্তু দুবাই অবতরণ করার পর আমাকে বলা হলো আরেকটি ফ্লাইটে উঠতে। আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো রিয়াদে। সেখানে অতিরিক্ত কাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই লোহার রড দিয়ে আমাকে পিটানো হতো। একদিন নিয়োগকারীর ছেলে আমার কাছে সুবিধা চায়। এতে রাজি না হয়ে আমি দৌড়ে তৃতীয় তলায় চলে যাই। আমার পিছু নেয় সে। ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।
এ ঘটনার পর তিন মাস হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে তাকে। এ সময়ে তাকে সহায়তা করেছেন ওই হাসপাতালে নিযুক্ত ভারতীয় কর্মীরা। এক পর্যায়ে তার স্বামী মোহাম্মদ খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় দূতাবাস তাকে উদ্ধার করে। এখন নিয়মিতভাবে ওসমানিয়া হাসপাতালে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য ইলিয়াস বেগমকে। তবে তিনি বলেছেন, দেশে ফিরতে পেরেছি। এ জন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আশা করি একদিন হাঁটতে পারবো। স্বামীর ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকবো না।
ইলিয়াস বেগমের মতো আরেক নারী সাইদাবাদের সিঙ্গারেনি কলোনির অধিবাসী আমিনা। তাকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে পাচার করা হয়েছিল সৌদি আরবে। তিনি সৌদি আরবের দিনগুলোকে অভুক্ত থাকার সময় হিসেবে স্মরণ করতে পারেন।
আমিনা বলেছেন, আমাকে দিনে একবার খাবার দেয়া হতো। পানির জন্য যেন তাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে হতো। তারা আমাকে নির্যাতন করা সত্ত্বেও সারাদিন আমাকে কাজ করতে হতো। একদিন আমি মালিকের বাসা থেকে বেরিয়ে এসে পুলিশ স্টেশনে যাই। পুলিশ ভারতীয় দূতাবাসকে বিষয়টি জানায়। ফলে আমি ভারতে ফিরতে সক্ষম হই।
এসব নারী বলেছেন তাদের ওপর চালানো নির্মমতা সম্পর্কে। কিন্তু তারা বলেন, এখনও মধ্যপ্রাচ্যে অবর্ণনীয় অবস্থার শিকার অসংখ্য নারী। তাদের অবস্থা শোচনীয়।


     এই বিভাগের আরো খবর