,

জাল দলিলে কোটি টাকার ভ‚মি দখল করেছে ‘নাহিদ ফাইন টেক্সটাইল’ অলিখিত স্টাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়

স্টাফ রিপোর্টার :: মাধবপুর উপজেলার হরিতলায় কতিপয় ব্যক্তিকে ভুয়া বিক্রেতা সাজিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকার ভুমি দখল করেছে ‘নাহিদ ফাইন টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, প্রকৃত ভুমি মালিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক স্বার আদায় করা হয়েছে অলিখিত স্টাম্পে। এ ছাড়াও কোম্পানী কর্তৃপক্ষের হুমকি-ধমকিতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগই করেছেন ভুমিহারা ওই ভুক্তভোগীরা। সংবাদ সম্মেলনে ভুমির প্রকৃত মালিক মোঃ ফজলুর রহমানের পুত্র মোঃ হিরন মিয়া বলেন, ‘জে.এল নং-১১, হরিতলা মৌজার ৩১০ খতিয়ানের ৪৫৭৮, ৪৫৭৯, ৪৫৮০ ও ৪৫৮৩ দাগের ২১৪ শতক ভুমির রেকর্ডীয় মালিক আমার দাদা একরাম আলী। তিনি মারা যাওয়ার পর বৈধ উত্তরাধিকার হিসেবে ওই ভুমির মালিক হন আমার পিতা মোঃ ফজলুর রহমান, চাচা মোঃ রঙ্গু মিয়া, ফুফু আয়েশা খাতুন ও মানিক চাঁন। আমার দাদার মৃত্যুর পর উক্ত ভুমি প্রায় ২০ বছর যাবত আমার পিতা, চাচা ও ফুফুরা ভোগ দখল করে আসছেন। উল্লেখিত পরিমান ভুমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা’। হিরন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৪ সালে আমাদের ভুমি সংলগ্ন এলাকায় কিছু ভুমি ক্রয় করে নাহিদ ফাইন টেক্সটাইল লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর তাদের লোভনীয় দৃষ্টি পড়ে আমাদের ভুমির উপর। একপর্যায়ে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কিছু দালাল ও প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় আমাদের প্রায় ১১৪ শতক ভুমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। পরে তারা এলাকার কয়েকজন ব্যক্তিকে ভুয়া বিক্রেতা সাজিয়ে একটি জাল দলিল সম্পাদন করে এবং অবশিষ্ট ভুমি জোরপূর্বক দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের দ্বারস্থ হই। কিন্তু এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় সুবিচারের জন্য আদালতের আশ্রয় নেই। গত ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ইং তারিখে আমার পিতা বাদী হয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় স্থানীয় দালালসহ কোম্পানীর কর্তাব্যক্তিদের আসামী করা হয়। পরবর্তিতে একই ব্যক্তিদের আসামী করে হবিগঞ্জের জেলা জজ আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেন আমার পিতা, চাচা ও ফুফুরা। মামলাটি দায়েরের পর চতুর কোম্পানী কর্তৃপক্ষ নানা অযুহাত দেখিয়ে বার-বার শুনানী পেছানোর আবেদন করে। যে কারনে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘœœ ঘটে এবং দীর্ঘ বিলম্বের পর বর্তমানে মামলাটি শুনানীর অপোয় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে হবিগঞ্জের একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়’। তিনি আরও বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর আরও বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ। আমাদের মামলাটি তুলে নিতে উল্টো মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি ও একের পর এক প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার আমাদের সাথে সমঝোতার নামে টালবাহানা, প্রহসন, প্রতারণা ও সময়পেন করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল কোম্পানীর পরিচালক মোঃ জাকির উল্লা চৌধুরীর পক্ষে মোঃ মনিরুজ্জামান সমঝোতার নামে আমাকে ডেকে আনেন হবিগঞ্জ শহরের আশরাফ জাহান মার্কেটে। সেখানে যাওয়ার পর একদল লোক অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তিনটি অলিখিত স্টাম্পে জোরপূর্বক আমার স্বাক্ষর আদায় করে। আমি এ বিষয়ে গত ৮মে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। মামলায় নাহিদ ফাইন টেক্সটাইল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াহিদ, পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান ও জাকির উলা চৌধুরীসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী হিসেবে উলেখ করি। মামলা দায়েরের পর তলাশী পরোয়ানা জারী করেন আদালত’। এ বিষয়ে ‘নাহিদ ফাইন টেক্সটাইল লিমিটেড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার পুলিশের নেই। তবে তিনি জানান, এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিঘœœ ঘটলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর