,

আজ হবিগঞ্জ পৌরসভা উপ নির্বাচন

৫ প্রার্থীর ৪ জনই আওয়ামীলীগের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ নির্বাচন। আজ সোমবার সকাল ৮টায় থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পৌরসভার ২০ টি কেন্দ্রে ‘ইভিএম’ পদ্ধতিতে এ ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় প্রথম ইভিএম-এর সাথে পরিচয় ঘটবে পৌরবাসীর। ৪৭ হাজার ৮ শত ২০ জন ভোটার মাত্র প্রায় দেড় বছরের জন্য নির্ধারন করবেন নতুন মেয়র। আজ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে এ উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। যাঁদের চারজনই আওয়ামী লীগের। অন্যজন বিএনপি নেতা। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা প্রার্থীরা হলেন, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান (নৌকা), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বতন্ত্র (আ.লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী, মো. মর্তুজ আলী (চামচ), জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র (আ.লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী সৈয়দ কামরুল হাসান (জগ), পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বতন্ত্র (আ.লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী এডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু (নারকেল গাছ) ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম. ইসলাম তরফদার তনু (মোবাইল)। এদিকে উপ-নির্বাচনে পৌর এলাকার ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা না গেলেও হবিগঞ্জ পৌরসভার ক্ষেত্রে অনেকটা ভিন্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদের এ উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই আওয়ামী লীগ ও তার বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় উপ-নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজানের পক্ষে নেই দলীয় বেশীরভাগ নেতাকর্মীই। উল্টো তারা মিজানের নৌকা ডুবাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিলাদ্রি শেখর পুরকায়স্থ টিটুর পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এমন সিদ্ধান্তে বেকায়দায় পড়েছে সাধারণ কর্মীরা। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের একটি অংশ যখন নৌকা ডুবাতে মরিয়া, তখন বৈঠা হাতে নিয়ে নৌকার হাল ধরেছেন অপর একটি অংশ। নির্বাচন বিশ্লেষকদের দাবি- নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াই হবে মূলত: আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিলাদ্রির মধ্যে। দু’জনেরই হবিগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আলাদা ব্যক্তি ইমেজ, যার কারণে ভোটের মাঠে কাউকে ছেড়ে কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ভোটের মাঠে সমান জনপ্রিয়তা থাকায় তাদের দু’জনের মধ্যেই হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, নৌকার প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজারের নিজের গ্রামে বিশাল একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। যেটি তাঁকে বিজয়ের মুকুট পরাতে পারে। অন্যদিকে নিলাদ্রি শেখর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোটে এগিয়ে যেতে পারেন বলেন ধারণা করছেন অনেকে। তবে হেভিওয়েট প্রার্থী নিয়ে শহরজুড়ে আলোচনা চললেও জয়ের আশা থেকে পিছিয়ে নেই বাঁকি তিন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের চারজন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও দলীয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির ভোট দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে মরিয়া হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এম. ইসলাম তরফদার তনু। মোবাইল প্রতীক নিয়ে খুব জোড়ে-সুরেই মাঠে নেমেছেন তিনি। প্রথম অবস্থায় শূন্যতায় পুড়লে শেষ মুহূর্তে বিএনপির সকল সহযোগী সংগঠন তাকে সমর্থন দেয়ায় হিসাব পাল্টে যেতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। এছাড়াও হবিগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির বিশাল একটি ‘ভোটব্যাংক’ রয়েছে। অন্যদিকে, চামচ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের নেমেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মতুর্জ আলী। এখন পর্যন্ত ভোটারের আলোচনায় না আসলেও আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন তিনিও। একই অবস্থা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কামরুল হাসানেরও। নিজের জগ প্রতীক নিয়ে দিনরাত ভোটারের দ্বারেদ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনিও। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান বলেন- ‘বিগত নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। এরপর থেকে আমি পৌরসভার জনগণের সুখ দুঃখে পাশে থেকেছি। আমি শতভাগ আশাবাদী নির্বাচনে বিজয়ী হবো। এ জন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’ তিনি বলেন- ‘আমি নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করবো।’ অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু বলেন- ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা করতে গিয়ে নারকেল গাছ প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছি। এই জনসমর্থনের কারণেই আমাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার সমর্থকদের হেনস্থা করার অপচেষ্টা চলছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসলাম তরফদার তনু বলেন- ‘স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা আমার সাথে কাজ করছে। এছাড়া হবিগঞ্জ পৌরবাসী বিএনপির প্রতি অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ হবিগঞ্জ পৌরসভায় মোট ভোটার ৪৭ হাজার ৮২০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩ হাজার ৮৩৮ ও নারী ভোটার ২৩ হাজার ৯৮২ জন। হবিগঞ্জে এবারই প্রথম ইভিএম-এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা নির্বাচন কমিশন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন- ‘নির্বাচনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। হবিগঞ্জে প্রথমবারের মতো ইভিএম-এ ভোট হচ্ছে, তাই ইতোমধ্যে আমরা ডামি ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করেছি। এছাড়া ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গত ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র জি কে গউছ। ফলে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এই শূন্য পদে ২৪ জুন উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর