,

কৃষ্ণপুরের ১৩১ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা ॥ স্মৃতি চারণ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে ’৭১ সালে হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুরে পাকিস্তানি হানাদারদের বার্স্ট ফায়ার প্রাণ হারানো ১৩১ শহীদকে। শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণের পাশাপাশি সেইদিনের নারকীয় ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের উদ্যোগে কৃষ্ণপুর বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্মৃতিচারণ সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা কর্মকার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এড. মোহাম্মদ আলী পাঠান প্রমুখ। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা। সভায় মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখ থেকে সেইদিনের নারকীয় হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা শুনেন অতিথিরা। জানা যায়, ১৯৭১ সালের এ দিনে ভোর থেকে থেকে ৫টার দিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার সেনা ক্যাম্প থেকে একটি স্পিডবোট ও ৮-১০টি বাওয়ালী নৌকায় করে হানাদার বাহিনীর একটি দল ওই গ্রামে আসে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় লাখাই উপজেলার মুড়াকরি গ্রামের লিয়াকত আলী, বাদশা মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউকের আহাদ মিয়া, বল্টু মিয়া, কিশোরগঞ্জের লাল খাঁ, রজব আলী, সন্তোষপুরের মোর্শেদ কামাল ওরফে শিশু মিয়াসহ ৪০ থেকে ৫০ জনের একদল রাজাকার-আলবদর। আর তাদের পরামর্শেই এ গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনী অন্তত ১৩১ জন পুরুষকে স্থানীয় কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে লাইনে দাঁড় করিয়ে বার্স্ট ফায়ার করে। পরে, আগুন দিয়ে গ্রামের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও লুটপাট করে। এছাড়া, গ্রামের অনেক নিরীহ নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। হানাদারদের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ পুকুরে কচুরিপানার নিচে আশ্রয় নেন। হানাদাররা চলে গেলে মরদেহগুলো উদ্ধার করে স্থানীয় বলভদ্র নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে গ্রাম ত্যাগ করে তারা। এ দিন হানাদারদের গুলি খেয়েও মৃতের ভান করে মাটিতে পড়ে থেকে প্রাণে রক্ষা পান গোপাল রায়, প্রমোদ রায়, নবদ্বীপ রায়, হরিদাস রায় ও মন্টু রায়সহ আরও কয়েকজন। গোপাল রায়ের বয়স হয়েছে যথেষ্ট, চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। চার মেয়ের বাবা তিনি। এ বয়সে নিজে আয় রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয় তার পক্ষে। সরকারের দেওয়া বয়স্ক ভাতা নিয়মিত পেলেও তাতে সংসার চলে না। এজন্য আরও সরকারি সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন এ বৃদ্ধ।


     এই বিভাগের আরো খবর