,

কবে আসতে পারে করোনা ভাইরাসের টিকা?

সময় ডেস্ক :: চীনে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে চাপা আতঙ্ক কাজ করছে। এর সংক্রমণে প্রতিদিন গড়ে এক ডজনের বেশি করে বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৬ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন আরো ৪ হাজার ৪৫৯ জন। ইতিমধ্যে চীন থেকে ডজনখানেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। ২০০৩ সালে চীন থেকে উৎপত্তি হওয়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপাইরেটরি সিনড্রোম (সারস) ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০ মানুষ মারা যায়। তাই নতুন ভাইরাসটি নিয়ে বিশ্ববাসী বেশ উদ্বিগ্ন। সারসের সময় এটি প্রতিরোধে টিকা তৈরিতে প্রায় ২০ মাস সময় লেগেছিল।
ততদিনে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এবার তাই আগে থেকেই জোরেশোরে প্রস্তুতি চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী এপ্রিল থেকে নতুন ভাইরাসটির জন্য সম্ভাব্য টিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করবেন বিজ্ঞানীরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও দ্য ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদন অনুসারে, তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ)-এর একটি নতুন সংগঠিত টিকা গবেষণা দল করোনা ভাইরাসটির সম্ভাব্য টিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করতে পারে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশনস ডিজিসেস-এর পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফওসি। তিনি জানান,
তিন মাসে সম্ভব হলে এ ধরনের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে জিন সিকুয়েন্স থেকে প্রাথমিক মানব পরীক্ষায় যাওয়ার দ্রæততম ঘটনা হবে এটি।
ধারণা করা হচ্ছে নতুন করোনা ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর। চীনা বিজ্ঞানীরা বেশ দ্রæত ভাইরাসটির ‘জেনেটিক সিকুয়েন্স’ (জেনেটিক ক্রম) শনাক্ত করতে পেরেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যাতে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এর টিকা আবিষ্কারে কাজ শুরু করতে পারে। জেনেটিক কোড জানা থাকায় টিকা তৈরিতে বিজ্ঞানীদের ভাইরাসটির নমুনার প্রয়োজন পড়বে না।
২০০৩ সালের সারস মহামারির সময় মার্কিন বিজ্ঞানীদের জেনেটিক ক্রম শনাক্ত করে মানুষের মধ্যে টিকার পরীক্ষা চালানোর প্রথম পর্যায়ে পৌঁছাতে ২০ দিন লেগে গিয়েছিল। ততদিনে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে সারস। এবার বিশ্বজুড়ে গবেষকরা নানাভাবে টিকা তৈরি ও ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যান্য উপায় আবিষ্কারের কাজে লেগে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা নানা দিক থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও মহামারি প্রতিক্রিয়া সংস্থাগুলোর প্রত্যাশা, কয়েক মাসের মধ্যেই অন্তত একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হবেই।
ফওসি’র সংস্থা ইউএস বায়োটেক মডার্ন ইনকরপোরেশনের সঙ্গে মিলে কাজ করছে। ওই প্রতিষ্ঠানটি রিবোনিউক্লেইক এসিড (আরএনএ) থেকে টিকা তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। আরএনএ হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক উপাদান যাতে প্রোটিন তৈরির নির্দেশনা থাকে। দলটি করোনা ভাইরাসের মুকুটসদৃশ পৃষ্ঠের ওপর ভিত্তি করে একটি আরএনএ টিকা তৈরির চেষ্টা করছে। প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস দেখতে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মতো।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড-এ বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিষয়ক সংগঠন কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) সমর্থিত বিজ্ঞানীরাও টিকা তৈরির কাজ করছে। বিজ্ঞানীরা জানায়, তারা ‘মলিউকুলার ক্ল্যামপ’ পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এ পদ্ধতিতে বিষাক্ত প্রোটিনগুলোয় একটি জিন যোগ করে সেগুলোকে স্থিতিশীল করা হয়। ওই প্রোটিনগুলো শরীরে প্রবেশ করিয়ে শরীরকে বোকা বানানো হয় যে, ওটা আসলে একটি ভাইরাস। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন সেটার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এর আগে ইবোলা ও অপর এক করোনা ভাইরাস মিডল ইস্ট রেসপাইরেটরি সিনড্রোম (মারস)-এর ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকরী ফলাফল দেখিয়েছে। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নোভাভাক্স ইতিমধ্যে মারস-এর বিরুদ্ধে একটি টিকা তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠানটি নতুন করোনা ভাইরাস নিয়েও কাজ করবে বলে জানিয়েছে।
এ ছাড়া, সারস ও মারস প্রতিরোধে তৈরি সংক্রমন-বিরোধী প্রোটিন ব্যবহারের দিকেও ঝুঁকছেন বিজ্ঞানীরা। বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান ভির বায়োটেকনোলজির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারবার্ট ভারজিন জানান, তার প্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ-বিরোধী প্রোটিনের একটি বিশাল সংগ্রহ আছে যেগুলো সারস ও মারসের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় কিছুটা সফলতা দেখিয়েছে। তিনি বলেন, এসব অ্যান্টিবডিগুলোর কয়েকটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষমতা দেখিয়েছে। উহানের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়ও এগুলো কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর