,

নবীগঞ্জে প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে নয়, পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখতে ভিড় লেগেছিল!

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জে বিদেশফেরত এক দম্পত্তির পারিবারিক দ্বন্দ্বকে করোনাভাইরাসের দিকে প্রবাহিত করে ভুল তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি বিভ্রান্তিতে পড়েছে ওই প্রবাসীর পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, গত ১৭ মার্চ
নবীগঞ্জ পৌর এলাকার গয়াহরি গ্রামের ধীরেন্দ্র দেবের পুত্র অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ধনঞ্জয় দেব তার স্ত্রী অনুকে সাথে নিয়ে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক এয়ারপোর্টে আসেন। কিন্তু তাদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। দেশে ফেরার পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছামাত্রই স্বামী তার স্ত্রীর পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র রেখে তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার অনুর পরিবারের লোকজন স্বামী ধনঞ্জয় এর বাড়িতে আসেন। কিন্তু স্বামী ধনঞ্জয় বাড়িতে ছিলেন না, তিনি ঢাকায় রয়েছেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় আশপাশের লোকজন জড়ো হন। কয়েকজন অতিউৎসাহিত ব্যক্তি জড়ো হওয়া মানুষের ছবি তুলে ‘করোনাভাইরাসের বিষয় জড়িয়ে’ সামাজিক যোগগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে গুজব ছড়ায়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ পৌর মেয়র ছাবির আহমেদ চৌধুরী সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি রাতে বসে সমাধানের আশ্বাস দিলে বিষয়টির সাময়িক সমাধান করেন। এদিকে, ‘ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে দেশের কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে ‘কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীকে দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়।’ সংবাদটি নিমেষেই ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়ে ওই প্রবাসীর পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল। তিনি গিয়ে প্রবাসীকে বাড়ীতে পাননি এবং প্রবাসী বাড়ীতে আসেনি বলেও পরিবারের লোকজন জানান।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে ভুল সংবাদ প্রচার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বকে করোনাভাইরাসের কোয়ারেন্টাইন দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় উল্লেখ করে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। যা জনগণ ও আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।’
নবীগঞ্জ পৌঁর মেয়র ছাবির আহমেদ বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক দ্বন্ধের বিষয়টি অবগত হয়ে স্থানীয় মুরুব্বিয়ানসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে প্রবাসী স্বামীকে পাওয়া যায়নি। এসময় প্রবাসীর পরিবারের লোকজনকে ১৪ দিনের হোম কেয়ারেন্টাইনের বিষয়টি স্বরণ করিয়ে দেই এবং তাদের হোম কেয়ারেন্টাইন শেষে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেই’।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন- ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর বাবা আমাকে জানিয়েছেন তার ছেলে এখনও বাড়িতে আসেনি। তিনি এখনও আত্মীয়ের বাড়িতেই অবস্থান করছেন’। তিনি বলেন, ‘ওই প্রবাসী বাড়িতে আসলে তাকে যেন ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয় তার নির্দেশ দিয়েছি’।
এদিকে সূত্রে জানা গেছে স্বামী-স্ত্রীর বিষয় নিয়ে তাদের অনুপস্থিতিতে স্বজনদের নিয়ে ওই রাতে শহরের একটি প্রতিষ্ঠানে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী, নবীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমান, বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু সিদ্দিকসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এ ব্যাপারে ধনঞ্জয় দেবের ভাই দীপক দেব জানায়, ধনঞ্জয় দেব ঢাকায় আত্নীর বাসায় রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসে অনু দেব তার পিত্রালয়ে ফিরে গেছে। নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম সালিশ বিচারের সত্যতা স্বীকার করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর