,

দুর্নীতির দায়ে মুকুলকে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে অব্যাহতি

মতিউর রহমান মুন্না : নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলকে আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে । তিনি চাল আত্মসাতকারী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয় এ জন্য (১৫ জুলাই) বুধবার উপজেলা অডিটোরিয়ামে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সর্বসস্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এর আগে গত ৭ জুলাই দৃশ্যমান দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় চেয়ারম্যান পদ থেকে ইমদাদুর রহমান মুকুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সকল জল্পনা, কল্পনা আর নাটকীয়তা শেষে অবশেষে ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলকে দল থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামীলীগ। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ ইজাজুর রহমান, এমদাদুল হক চৌধুরী, হাজী আব্দুল মোহিত চৌধুরী, সমর দাশ, মেহের আলী মহালদার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান কাজল, কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু, রবিন্দ্র কুমার পাল, গজনাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজমান আলী, নবীগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মেলেন্দু দাশ রানা, নবীগঞ্জ সদর ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাবের হোসেন চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুর রহমান স্বপন, প্রচার সম্পাদক আব্দুল কাদির, দপ্তর সম্পাদক বিধান ধর, স্বাস্থ্য জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক টিপলু ভট্টাচার্য, কুর্শি ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হাসান চৌধুরী, করগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, দীঘলবাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সুজাত চৌধুরী, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মুহিবুর রহমান চৌধুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক গৌতম দাশ, নবীগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দিলারা হোসেন, নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি শেখ শাহানুর আলম ছানু, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মোহিত, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান সুমন, উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি ফারুক মিয়া, কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ,নবীগঞ্জ উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি দুলাল চৌধুরী,দেবপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাদারণ সম্পাদক ফজলুল করিম, নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়ছল তালুকদার, মাহবুবুর রহমান রাজু প্রমুখ।

উক্ত বিশেষ বর্ধিত সভায় নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গজনাইপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে ১০ টাকা কেজি দরের চালের
তালিকায় সুবিধাভোগীর নামের চাল প্রায় ৪ বছর ধরে আত্মসাত ও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি দায়ে সর্বস্মতিক্রমে তাকে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বরাবর প্রেরণ করার প্রস্তাবও গৃহিত হয়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ১০টাকা কেজি দরের চালের তালিকায় সুবিধাভোগী অসহায়দের চাল প্রায় ৪ বছর ধরে আত্মসাতসহ নানা ধরণের অনিয়ম দুর্নীতি করায় তিনি সরকার কর্তৃক বরখাস্ত হন। দুর্নীতি পরায়ন এমন কর্মকাণ্ডে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সর্বসস্মতিক্রমে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদ থেকে মুকুলকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
উল্লেখ্য, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ৭ জুলাই নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুল রহমান মুকুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। উপ-সচিব মোহাম্মদ ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
প্রষঙ্গত, গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল প্রাপ্তির তালিকায় মোট উপকারভোগী রয়েছেন ১ হাজার ১৮৫ জন। ২০১৬ সালে ওই তালিকা তৈরি করা হয়। তখন থেকে উপকারভোগীদের চাল পাওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই পাননি সে সুবিধা। তালিকায় কোনো কোনো ব্যক্তির নাম ৩ থেকে ৪ বার রয়েছে। একাধিক ব্যক্তির নাম প্রায় ৫০টির মতো রয়েছে তালিকায়। রয়েছে কয়েকজন মৃত ব্যক্তির নামও। আবার কয়েকটি গ্রামে কোনো হিন্দু পরিবার বসবাস না করলেও ওই গ্রামের তালিকায় দেওয়া হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ভুয়া নাম। তালিকায় নাম থাকলেও কোনো সময়ই চাল জুটেনি, এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। এদিয়ে দেশের শীর্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে উপজেলা প্রশাসন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর