,

জর্ডানে আন্দোলনে বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকরা, দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি

সময় ডেস্ক ॥ জর্ডানের রামথা শহরে একটি পোশাক কারখানায় বেতন বাড়ানোর দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকরা আন্দোলন ও ধর্মঘট করছেন। জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান জানান, শহরটির আল হাসান শিল্প এলাকায় অবস্থিত ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেলে এ আন্দোলন চলার সময় কিছু ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, এখন তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জর্ডানে বাংলাদেশ থেকে পুরুষ শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। কারণ তাদের বিরুদ্ধে এর আগে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। একটি ডাস্টবিনে একজন বাংলাদেশি নারী অভিবাসীর মরদেহ পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পোশাক শ্রমিকরা তাকে সহকর্মী দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা আতঙ্কে আছেন বলেও জানিয়েছেন।
আম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভের এই ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি আটক হননি। তবে ঘটনা সামাল দিতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেল দেশটির সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান। এ কারখানার শ্রমিকদের বেশিরভাগ বাংলাদেশি। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী সেখানে ৩০ হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছেন।
দেশটিতে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা দেয় এমন একটি সংস্থা তামকিন ফর লিগ্যাল এইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস বলছে, শ্রমিকদের অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশি নারী। দূতাবাসের তথ্যমতে, জর্ডানে আনুমানিক ৭০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন, যাদের অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক।
ঝিনাইদহ জেলা থেকে যাওয়া এক শ্রমিক বছরখানেক হলো ক্লাসিক ফ্যাশন অ্যাপারেলে মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ শ্রমিক জানান, সেখানে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন না বাড়ানোয় আন্দোলন শুরু করেন তারা। আন্দোলনে সব শ্রমিক যোগ দিয়েছে। দুই দিন আগে রাত ১১টার দিকে কয়েকটি গাড়িতে এসে লোকজন তাদের হোস্টেল থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। আর একটা মেয়ে ব্যাংকে গিয়ে ফেরেনি। এখন তারা খুব ভয়ের মধ্যে আছেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে যাওয়া এক শ্রমিক বলেন, তারা এখন আর বিক্ষোভ করছেন না। তবে কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, যারা যারা কাজ করতে চাও তারা শুরু কর, আর যারা কাজ শুরু করবে না তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এখানে অবস্থা খুবই খারাপ। এ আন্দোলন আসলে করোনা টেস্ট আর বেতন বাড়ানোর দাবিতে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে ক্লাসিক ফ্যাশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান জানান, দূতাবাস কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছেন, বিচ্ছিন্ন কতগুলো ঘটনা পরপর ঘটেছে। এর সঙ্গে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বিষয়টি শ্রমিকদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। রোববার সেখানে শ্রম মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিও ছিলেন। সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে পরিমাণ বেতন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে, সেটি এ মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে প্রতি জানুয়ারিতে যে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়, সেটি এই নভেম্বরেই দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রদূত নাহিদা জানান, ডাস্টবিনে যে মেয়েটির মরদেহ পাওয়া গেছে তিনি একজন গৃহকর্মী ছিলেন। এই নারী শ্রমিকের চুক্তি ছিল সৌদি আরবে কাজ করার। তিনি যে সৌদি পরিবারে কাজ করতেন তারা তাকে জর্ডানে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।


     এই বিভাগের আরো খবর