,

সাংবাদিকের দায়িত্ব সত্য উন্মোচন করে উপস্থাপন করা: হাইকোর্ট

সময় ডেস্ক ॥ দীর্ঘ ১৭ বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়ানো অস্ত্র মামলার আসামি বৃদ্ধ রাবেয়া খাতুনকে অব্যাহতি দেওয়া সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের অক্টোবরে সংক্ষিপ্তভাবে এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় এক বছর পর সম্প্রতি ৩৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে আদালত বলেন, গত বছরের ২৫ এপ্রিল সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যিনি সংগ্রহ করেছেন, তিনি সত্যিকার অর্থে একজন উপযুক্ত সংবাদকর্মী হিসেবে মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। যেহেতু একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব শুধু সংবাদ পরিবেশনই নয়, বরং সত্যকে উন্মোচিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা। রায়ে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনায় ‘এবিউস অব দ্য প্রসেস অব দ্য কোর্ট’ স্পষ্টত প্রতীয়মান বিধায় ওই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম বাতিল করা হলো। ফলে রাবেয়া খাতুনকে এ মামলায় আর আদালতে আসতে হবে না। এ মামলায় আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল হাইকোর্টকে একজন অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মতো সহায়তা করেছেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। রায়ের একটি অনুলিপি আইন ও বিচার বিভাগের সচিবকে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তাদের অধীন জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে দশ বছর বা তার অধিককাল বিচারাধীন মামলার প্রতিবেদন সংগ্রহ করে তিনটি তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। প্রথমত, দশ বছর বা তার অধিক এবং ১৫ বছরের কম সময়কাল বিচারাধীন মামলা, দ্বিতীয়ত, ১৫ বছর বা তার অধিক এবং তৃতীয়ত, ২০ বছর পর্যন্ত বিচারাধীন এবং ২০ বছরের অধিককাল বিচারাধীন মামলার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ৬ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে তা দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া রায়ের অনুলিপি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং ডিএমপি কমিশনারের কাছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তেজগাঁও থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে সংশ্নিষ্ট আদালতে দাখিল করতে হবে। রাবেয়ার মামলার আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল বলেন, ফৌজদারি মামলায় বিচারের ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের বিষয়ে এবং বিচারপ্রার্থীর দ্রুত বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট ও উপমহাদেশের বিভিন্ন আলোচিত মামলার রেফারেন্স পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট এই রায়ে উপনীত হয়েছেন। সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ হয়েছিল। ওই দিন রাবেয়া সমকালকে জানিয়েছিলেন, ১৭ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেন, কিন্তু মামলা শেষ হয় না। রায়ে আদালত ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক আল মামুন ও সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী পিপি শাহাবুদ্দিন মিয়াকে সতর্ক করে বলা হয়, তাদের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে মামলাটি এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে, যা খুবই দুঃখজনক। আদালতে বিচারকের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন এবং এপিপি শাহাবুদ্দিন মিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।


     এই বিভাগের আরো খবর