,

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, রিকশা চালকদের দালালদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি রোগীরা

জুয়েল চৌধুরী ॥ ডাক্তার, নার্স, রিকশা চালকদের দালালদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি হয়ে পড়েছে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের রোগীরা। এমন পরিণতিতে হাসপাতালে আসা রোগীদের দূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারও দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের। হবিগঞ্জের বৃহৎ এ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে চলমান নৈরাজ্য ও নির্মমতা দেখার যেন কেউ নেই। এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল নেই। ডাক্তারের স্বল্পতার কারণে ডাক্তারের সহকারী ও ওয়ার্ড বয়’ই জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা। হাসপাতাল সমূহে শুধু ডাক্তার সংকট নয় বরং সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ অন্যান্য বিভাগে লোকবলের চরম সংকট। জেলা সদর ও উপজেলার এ ছাড়া হাসপাতালে ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, প্যাথলজিস্ট যন্ত্রপাতি, ইত্যাদিসহ বহু নাম না জানা মূল্যবান চিকিৎসা সামগ্রী নেই। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার আশায় আগত সাধারণ মানুষ ওই সমস্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটু ভালো আর বিনামূল্যে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আশা নিয়ে দরিদ্র রোগীরা হাসপাতালে আসে। কিন্তু এখানে এসেই তাদের পড়তে হয় বিপাকে, নানা বিড়ম্বনায়। হাসপাতালের প্রবেশ গেট থেকে শুরু করে কেবিন, বেড পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির দালাল। তাদের মাঝে অন্যতম হাসপাতালের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রিকশা চালক। তারা নানা প্রলোভন, যেমন দ্রুত ডাক্তার সেবা পাইয়ে দেয়া, প্রয়োজনীয় ঔষধ, থাকার জন্য কেবিন ইত্যাদি দেখিয়ে তারা দরিদ্র ও সহজ সরল রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এক রকম সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। বিষয়টা অনেকটা এমনই- আগে টাকা পরে চিকিৎসা সেবা। এদের খপ্পরে পরে অনেকেরই চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা উল্টো দ্বিগুণ অসুস্থ হয়ে কখনো হাসপাতালের বারান্দায়ও শুয়ে কাতরাতে দেখা যায়। অভিযোগ আছে, এরা সরকারি ডাক্তারদের দ্বারা নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রিত আর রোগী প্রতি এসব দালালদের ডাক্তাররা কমিশন দিয়ে থাকে। রোগী দেখার সময় দেখা যায় তাদের বিভিন্ন রকম মিটিং থাকে। দুপুরের খাবারের আগেই ডাক্তারসহ অনেক নার্সরা বিরতিতে চলে যায়। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরেও তাঁদের দেখা মেলে না।
ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা তাদের সরকারি কর্মেেত্রর চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানকেই বেশি প্রাধান্য দেন। আরও একটি উল্লেখযোগ্য চিত্র হচ্ছে, ডাক্তাররা কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতি। দামী গিফট কিংবা বড় ধরনের সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেক সময় ওই সব প্রতিনিধির সাথে ডাক্তারদের গল্প ও আলাপ-চারিতায় মেতে উঠতে দেখা যায়।
তাদের এই কার্যক্রমের মাধ্যমেও লাইনে অপোমান থাকা রোগীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। ডাক্তারদের অবহেলা ও অনুপস্থিতির সুযোগে নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাই হয়ে উঠে সর্বেসর্বা। রোগী দেখা থেকে শুরু করে সবকিছুই করছে অবলীলায়। সুযোগ-সুবিধাহীন সরকারি হাসপাতালে একশ্রেণির ডাক্তার, নার্স, আয়া-কর্মচারীর চরম দুর্ব্যবহারের সামনে রোগীরা থাকছেন বড়ই অসহায়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীসহ অন্যান্য রোগীরা পর্যাপ্ত ঔষধ থাকা সত্তেও সঠিকভাবে ঔষধ পায় না। ডাক্তারদের লেখা স্লিপ নিয়ে ঔষধ আনতে গেলেই ২/১ টা সস্তা ঔষধ দিয়ে বলা হয়, বাকীগুলো স্টোরে নেই তাই বাহির থেকে কিনতে হবে। অথচ বাহিরের ফার্মেসীতে গেলেই দেখা যায় না পাওয়া ঔষধগুলোর অগিমূল্য। এতসব দামী ঔষধ তাহলে যায় কোথায়? এই সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায় নিকটস্থ বেসরকারি কিনিকগুলোতে সেবা নিতে গিয়েও সাধারণ রোগীরা পড়ে নতুন হতাশা ও যন্ত্রণায়।
উন্নত চিকিৎসার নামে চাকচিক্যময় ওই সব কিনিকে ভালো চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। সাধারণ রোগীরা চিকিৎসকদের নামী-দামী ডিগ্রি দেখে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। ডাক্তারদের অতিরিক্ত ফি, প্রয়োজনীয় ঔষধের সাথে অপ্রয়োজনীয় ঔষধ, ঊর্ধ্বমূল্যের টেস্ট ফি, বেড ভাড়া দিয়েই ধার দেনা করে আনা অসহায় রোগীদের পকেট খালি হচ্ছে। এই সব চার্জ তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতই বাড়াচ্ছে। তাছাড়া রোগীকে দরকারি ও অদরকারি প্যাথলজি টেস্টের জন্য লম্বা স্লিপ দিয়ে মনোনীত কিনিক কিংবা ল্যাবরেটরি থেকে পরীা করার জন্য পরামর্শ দেয়। অন্য কোথাও থেকে করলে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য হয়। এখানেও রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি আর হুঁশিয়ারির কোন কিছুতেই পরোয়া নেই হাসপাতালগুলোর। অভিজাত হাসপাতাল নামের চিকিৎসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক কৃর্তৃপক্ষও অনেক বেশি প্রভাবশালী হওয়ার কারণে বরাবরের মতোই রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে।


     এই বিভাগের আরো খবর