,

মেয়েদের ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেইসবুক-টিকটক আইডি খুলে প্রতারণা

ভুক্তভোগীদের কু-প্রস্তাব ও নানা হুমকি ॥ থানায় জিডি

জাবেদ তালুকদার ॥ প্রযুক্তির কল্যাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন হাতের মুঠোয় আর নেট দুনিয়ায় দ্রুতই বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে একদিকে যেমন বেড়েই চলছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা, সেসঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। নেট দুনিয়ায় অবাধ বিচরণের সুবাদে একটি চক্র ফেসবুককে ব্যবহার করছে নিজেদের অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ‘ফেক আইডি’র মাধ্যমে ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে এ হয়রানি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মেয়েরা। আইনের কাছে গিয়েও সহজে মিলছে না প্রতিকার, উল্টো পড়তে হচ্ছে নানা আইনি জটিলতায়। মেয়ে বা পুরুষের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা ও হয়রানি করছে একটি চক্র। এমন একটি চক্র এবার হবিগঞ্জের নারীদের টার্গেট করে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। এমনই প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক স্কুল শিক্ষিকা, গৃহবধু ও শিক্ষার্থীরা। সবাই এসব প্রতারণায় শিকার হলেও প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে চায় না। এ নিয়ে ২ জন নারী হবিগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন। তাদের অভিযোগ একজনের ছবি ও নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একাউন্ট খুলেছে এক প্রতারক। সে ওই মেয়েকে ম্যাসেজ দিয়ে করছে ব্ল্যাক মেইল। অপর নারীর অভিযোগ তার ছবি দিয়ে আরেক প্রতারক টিকটকে একাউন্ট খুলে ছবির সাথে অশ্লীল কূরুচিপূর্ণ মিউজিক ব্যবহারের মাধ্যমে ভিডিও তৈরী করে প্রচার করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ নারী জানান তাদের একজনের ছবি ও অপরজনের নাম দিয়ে ফেসবুকে আইডি খুলে বিভিন্ন খারাপ ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। এ কারণে সমাজে মুখ দেখাতে পারছেন না দুজনেই। ফেইসবুক একাউন্ট খুলে তাদের পরিচিতজনদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিচ্ছে এবং টিকটকের ভিডিওগুলো ফেইসবুকে শেয়ার করছে। এছাড়াও তাদের ছবিতে কূরুচিপূর্ণ ক্যাপশন দিয়ে তা ফেইসবুকে পোস্ট করছে। এমনকি বিভিন্ন পর্ণ তারকাদের অশ্লীল ছবিতে মুখে স্টিকার তাদের নামে ওই সকল ছবি প্রচার দিচ্ছে। পরে তারা শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। আরেক নারী জানান গত ২৫ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) দুপুর ১২.০০ ঘটিকার দিকে তিনি ফেইসবুকে প্রবেশ করে দেখেন তার ছবি ও নাম দিয়ে তৈরী একটি ফেইসবুক একাউন্ট তার কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এসেছে। এটা দেখে তিনি রিমিমত হতভম্ব হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ওই একাউন্ট থেকে তাকে মেসেজ দিয়ে নানা হুমকি ও কু-প্রস্তাব দেয়। ওই প্রতারক ম্যাসেজে লিখে তার প্রস্তাবে রাজি না হলে বড় ধরনের ক্ষতি করবে। তাৎক্ষনিক তিনি ফেসবুকের রিপোর্ট অপশনে গিয়ে তার নামে ফেইক আইডি খুলা হয়েছে মর্মে অভিযোগ জানান। এক পর্যায়ে আইডি ডিজেবল করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এতে ভূক্তভোগী নারী কিছুটা স্বস্থি পান। কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার দেখা যায় একই নামে তার ছবি ব্যবহার করে আরেকটি একাউন্ট খুলা হয়েছে। এমনকি ওই আইডি থেকেও একই কায়দায় নারীকে হুমকি ও কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তিনি আবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দেন। আবার ফেক আইডিটি বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। এর পরের দিন (ডাক্তার রুজি কুলাউড়া) নামে একাউন্টে তার ছবি ব্যবহার করে একই কায়দায় ম্যাসেজ দিয়ে হয়রানী করতে থাকে। এমনকি ওই আইডি থেকে ভুক্তভোগী বিভিন্ন অসামাজিক পোষ্ট করা হয়। (ডাক্তার রুজি কুলাউড়া) একাউন্ট থেকে যুবকদের সাথে একান্তভাবে দেখা করার তার নাম্বার দিয়ে পোষ্ট করা হচ্ছে। এ ঘটনায় গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারী হবিগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন ভূক্তভোগী এই নারী। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র জানায়, এর আগে জানুয়ারী মাসে হবিগঞ্জের এক মেকআপ আর্টিস্টের ছবি ব্যবহার করে “ডাক্তার রুজি কুলাউড়া” সহ কয়েকটি একাউন্ট তৈরী করা হয়। এ নিয়ে তার ফেইসবুক একাউন্টে একটি সতর্কতামূলক পোস্টও করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী সাংবাদিক ইউরো বাংলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীই সাইবার বুলিংয়ের নিয়মিত শিকার হচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। তবে একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর অপব্যবহারও। অনেক চক্র এভাবে মেয়ের ছবি ও নাম ব্যবহার করে ফেক আইডি খুলে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। এমনকি অনেক নারীই তাদের লালসার শিকার হয়েছেন। কিন্তুমান সম্মানের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলছেন না। তিনি বলেন, কারও নাম এবং ছবি দিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট খুললে প্রথমে আসল পরিচয়ধারী ব্যক্তি এবং তার সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের ওই ফেক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে হবে। এতে ফেসবুক কতৃপক্ষ যাচাই বাচাই করে ফেক আইডি বন্ধ করে দিবে। রির্পোটে বন্ধ না হলে ফেক আইডিটির সম্পূর্ণ প্রোফাইল লিঙ্কসহ স্ক্রিনশট নিয়ে সংরক্ষণ করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করুন। অথবা সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারে সরাসরি অভিযোগ জানানো যাবে। গণমাধ্যমে এক সাক্ষাতকারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মুস্তাফা বলেন, ফেসবুকের জন্মস্থান আমেরিকায়। এটি তাদের নিয়মানুযায়ী চলে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বে এমন কোনো প্রযুক্তি নেই যার মাধ্যমে ফেসবুকের ফেক আইডি, কমেন্ট লিঙ্ক, ভিডিও এগুলো শনাক্ত করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করতে হয় এবং তারা যদি মনে করে এটি বন্ধ করা দরকার, সেটি বন্ধ করে। একটা প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে সেটি দিয়ে আমরা ফেসবুক, ইউটিউব বন্ধ করতে পারি; কিন্তু বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। লাখ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ফেসবুক, ইউটিউব দিয়ে মানুষ শিক্ষণীয় কিছু পায়, মানুষের উপকারে আসে। এমন একটি প্লাটফর্ম কেউ বন্ধ করতে চায় না। যে অপরাধগুলো হয় সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, অপরাধের ব্যবস্থা নেওয়ার মূল দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, বিচার করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। আমরা এগুলো মনিটরিং করে ফেসবুক, ইউটিউবকে জানাতে পারি এবং তারা যদি বন্ধ করে, এটা তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। আমাদের কিছু করার নেই।


     এই বিভাগের আরো খবর