,

হবিগঞ্জ শহরে দি জাপান বাংলাদেশ হসপিটাল মালিকের ৬ মাসের কারাদণ্ড

অপারেশন থিয়েটারে রোগী রেখে পালিয়ে গেলেন দুই চিকিৎসক

জুয়েল চৌধুরী : এনেস্থেসিওলজিস্টের অনুপস্থিতিতে সিজারিয়ান অপারেশন করাসহ বিভিন্ন অপরাধে হবিগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার দি জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক আরিফুল ইসলাম আরিফ (৪০) কে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সাথে কোর্ট স্টেশন এলাকার মায়ের হাসি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারকে সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ জহুরুল হুসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানকালে ভ্রাম্যমান আদালত দেখতে পান দি জাপান হাসপাতালে এনেস্থেসিওলজিস্ট, নার্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। এনেস্থেসিওলজিস্ট ছাড়াই এখানে সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে সিজারিয়ান অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. উম্মে কাসপিয়া সটকে পড়েন। পরে হাসপাতালটির মালিক আরিফুলকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা পাল ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হকসহ একদল সদর থানার একদল পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকেও অভিযান চালান। এ সময় মায়ের হাসি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিককে শেষবারের মতো সতক করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ৫ মিনিটেই আল্ট্রাস্নো রিপোর্ট দেয়া হয়। অন্যদের রিপোর্টের সাথে যার মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ডাক্তার শুভন শেখর দাস সর্বরোগের চিকিৎসা করেন। ওই সময় তাকেও পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহরে অর্ধশতাধিক অবৈধ কিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। এর অধিকাংশ ডাক্তারই ভূয়া। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত শায়েস্তানগরের মুন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, চাঁদের হাসি, দি জাপানসহ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভুয়া ডাক্তারদের জরিমানা করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও ওই সব কিনিকে ভূয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা চলে। এ সব ডাক্তারের কারণে অনেক রোগীরা মৃত্যুপথযাত্রী।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নুরুল হক জানান, নিজস্ব ডাক্তার-নার্স ও লাইসেন্স নবায়ন না থাকাসহ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন দি জাপান বাংলাদেশ হসপিটালে যান। তখন হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে একটি সিজার মাত্র শেষ হয়। সেখানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উম্মে কাসমিরা ছিলেন। আর ওই রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ফাইলে ডা. জাহিদুর রহমানের নাম দেখতে পেলেও তিনি সেখানে ছিলেন না। এছাড়াও অপারেশনের জন্য এনেসথেসিয়ার কোনো ডাক্তারের নাম পাননি। এরপর সিভিল সার্জন প্রশাসনকে জানালে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এই ফাঁকে ডা. উম্মে কাসমিরা জাহান হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। রোগীর অপারেশন করার জন্য এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও ছিল না। এতে বোঝা যায়, ওই হাসপাতালে এনেসথেসিয়া ও অপারেশন পরবর্তী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাজগুলো আসলে আয়া বা হাসপাতালের স্টাফরাই করে থাকেন।
এছাড়া যে রোগীটিকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়েছে, তাকে সেখান থেকে এনে প্রথমে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার অবস্থা আশংকাজনক। অভিভাবকরা অভিযোগ দিলে তারা তদন্তে নামেন। এরকম আরও অবৈধ কিনিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল সংলগ্ন দি জাপান বাংলাদেশ হসপিটালে নিয়মিত চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল না। এছাড়াও রোগীদের ভুল চিকিৎসাসহ নানা ধরনের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে হাসপাতালের মালিক মো. আরিফুল ইসলামকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর