,

হবিগঞ্জের সদর হাসপাতালসহ ৭ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রপাতির সংকট

স্টাফ রিপোর্টার : হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালসহ ৭ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। কিন্তু এর প্রতিকারে নেই কোনো পদক্ষেপ। প্রায় দেড় যুগ যাবত রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক যন্ত্র এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে ৭ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর নতুন গঠিত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় এখনো কমপ্লেক্স ভবন তৈরি হয়নি। আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি ও লোকবল সংকটের কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র মানুষ।
হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, হবিগঞ্জের সদর, বানিয়াচং, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত দেড় যুগ যাবত এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জে কমপ্লেক্স ভবন নেই। যে কারণে এক্সরেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি একেবারেই নেই। কয়েকটিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও নেই পরিচালনা করার মত বিশেষজ্ঞ লোক। কয়েকটি আবার চলছে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন ছাড়াই। প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাবের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানের অভাব প্রকট হয়ে ওঠেছে।
বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা আক্তার বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে মেশিন থাকলেও তা বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বেশ কয়েকবার মেরামতের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্সরে মেশিনটি মেরামত করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। তারপরও আমি প্রতিমাসে এক্সরে মেশিনের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করি। কিন্তু সেই পর্যন্ত থাকছে এক্সরে মেশিনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি।
একই মন্তব্য করেছেন লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোস্তফা জামান, নবীগঞ্জের ডা. আব্দুস সামাদ, বাহুবলের ডা. বাবুল কুমার দাশ, আজমিরীগঞ্জের ডা. মো. ইকবাল হোসেন।
তবে এক্সরের চেয়েও অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্যাথলজির লোকবল নিয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হায়দার মো. ইশতিয়াক মামুন। তিনি বলেন, আমার হাসপাতালে ১৫ নার্স হলেই চলত। কিন্তু এখানে ৩০ জনের মত নার্স আছে। কয়েকজন নার্স কমিয়ে এই টাকায় দুইজন প্যাথলজিক্যাল টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া যেত। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো সুফল পাচ্ছি না। যে কারণে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অদিতি রায় বলেন, নবগঠিত উপজেলা শায়েস্তাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ না হওয়ায় আগের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রতেই কার্যক্রম চলছে। নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে সেখানে কাজ করতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হয়ত এটি নির্মাণ হলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে।
লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কয়েকজন রোগী ও স্বজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের একজন উপজেলার বামৈ গ্রামের আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত এক্সরের জন্য আমাদেরকে হবিগঞ্জ শহরে যেতে হয়। ইদানিং উপজেলায় কয়েকটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক হওয়ায় ভোগান্তি একটু কমেছে। তবে টাকা খরচ হচ্ছে অনেক বেশি।
লাখাই উপজেলার জিরুন্ডা গ্রামের নুরুন্নাহার বেগম বলেন, গর্ভবতী কাউকে নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য হবিগঞ্জ শহরে যেতে হয়। যদি লাখাইয়ে এই ব্যবস্থা থাকত তাহলে আমাদের অনেক কষ্ট কমে যেত।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নূরুল হক বলেন, আমরা এই সমস্যাগুলোর ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিমাসে ঢাকায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও লোকবল সংকটের কথা জানিয়ে তা প্রতিকারের জন্য লিখিতভাবে প্রতিবেদন প্রেরণ করি। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে বলে আশা করছি।


     এই বিভাগের আরো খবর