,

‘পেটে পাথর বান্ধা ছাড়া গতি নাই’

বিশেষ প্রতিনিধি : জমির আলী (৫০) একজন দিনমজুর। তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার একটি গ্রামে। তিনি কাজের খোঁজে মৌলভীবাজার শহরে এসেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে শহরের চৌমোহনা চত্বরে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আলাপকালে জমির আলী বলেন, পাঁচ দিন হলো মৌলভীবাজারে এসেছেন। বাড়িতে চার-পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ফসলের চাষ করেছেন। এই ধান চাষেও অনেক টাকা খরচ। ধারদেনা করতে হয়েছে। বর্তমানে বাড়িতে কোনো কাজ নেই। কিন্তু সংসার চালাতে খরচ তো লাগে। সংসারে তিন মেয়ে, দুই ছেলেসহ সাতজন। এর মধ্যে এক ছেলে প্রতিবন্ধী। ছেলেমেয়েদের পড়াতে অনেক খরচ। সংসারের খরচ চালানোর টাকা জোগাড় করতে মৌলভীবাজারে আসা। জমির আলীর মতো অনেকে মৌলভীবাজারে এসেছেন কাজের সন্ধানে। তাঁদের উদ্দেশ্য বোরো ফসল তোলার আগে কিছু বাড়তি রোজগার করে সংসারের চাহিদা মেটানো। টানাপোড়েনের সংসারে চাহিদার অনেক কিছু জোগাড় করার সামর্থ্য নেই জমির আলীর। তবে তাঁর মুখ হাসিমাখা। তিনি বলেন, একদিন কাজ করলে ৬০০–৬৫০ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে পোষানো যায় না। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ছেলেমেয়েদের পড়ানো ও সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।
জমির আলী বলেন, ‘যাই রুজি করি, দিনে দুই-আড়াই শ টেকা (টাকা) খরচ অইয়ে যায়। একবেলা হোটেলে ডাইল-ভাত খাইলে ৫০ থাকি ৬০ টেকা লাগে। মাছ-ভাত খাইলে ৮০ থাকি ১০০ টেকার নিচে অয় না। আগে এক কাপ চা খাইছি পাঁচ টেকা দিয়া। এখন এক কাপ চা ১৫ টেকা। দিনে দুই কাপ চা খাইলে ৩০ টেকা। ৮০ টেকার সয়াবিন তেল অইছে ২০০ টেকা। আমরা কম দামের মোটা চাইল খাই। এটাও ৫৫ থিকা ৬০ টেকা কেজি। পেটে পাথর বান্ধা ছাড়া গতি নাই।’ জমির আলীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজমুল হাসান নামের আরেক দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘দেশের মাইনষের টেকা আছে। টেকা না থাকলে এত বড় বড় দালান ক্যামনে বানায়। আমরা গরিব বলেই কাজ করি, কর্ম করি খাওয়া লাগে।’
এবার জমির আলী বলেন, ‘দেশের মানুষের সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আমেরিকায় বাসাবাড়ি আছে। আমরা কিন্তু গরিব না। আমরা গরিব অইলে দেশের মানুষ বিদেশে বাসা কিনে ক্যামনে?’


     এই বিভাগের আরো খবর