,

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, সংশোধন করা হবে- আইনমন্ত্রী

সময় ডেস্ক : সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বকারী পীড়নমূলক বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল হবে না। তবে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তেমন কিছু সংশোধন আনা হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে এটি সংশোধন করা হবে।’
অনুষ্ঠানে বিতর্কিত এই আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির মাধ্যমে গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। আইনটি সংশোধন করা হলেও জনগণের কাছে এটা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইউনেস্কো, আর্টিকেল নাইনটিন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথভাবে গতকাল বুধবার এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। ‘ভবিষ্যত অধিকার গঠন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে টিআইবি’র ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা ভার্গ ভন লিন্ডে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস, ইউনেস্কো ঢাকা অফিস ইনচার্জ অফিসার সুজান ভিজ ও ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের টেকনিক্যাল নোটের’ ভিত্তিতে আগামী সেপ্টেম্বরের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের একটা টেকনিক্যাল (কারিগরি) নোট পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি, তাদের কিছু ধারা বাদ দেওয়া এবং সংশোধনের বিষয়ে পরামর্শ ছিল। যদিও আমাদের মতভেদ রয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই, অক্টোবরের পরে নয়। আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংশোধনীটা করব।”
গত বছরের জুনে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভায় সংবাদকর্মী ও মুক্ত মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা যাবে না বলে দাবি তোলে সম্পাদক পরিষদ।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আর দেশের প্রচলিত আইনে বহু ধারা রয়েছে, যাতে সাংবাদিকেরা সুরক্ষা পান।’ সরকার মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাসী উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘সরকার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে সরকার কাজ করছে। এই আইনের সমস্যা দূর করে এটাকে সর্বসাধারণের আইন করা হবে। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনোই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করবেন না। এটা মূলত সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করা হয়েছে।’
এ সময় ‘প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু’ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য; সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার যেমন বাকস্বাধীনতা আছে, প্রধানমন্ত্রীরও আছে। আর প্রথম আলোর সম্পাদক জামিন পেয়েছেন। জনগণই নির্ধারণ করবে কোনটি সঠিক, কোনটি সঠিক নয়। তবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লিস্টে বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানের নিচে থাকে, তবে সেটা আসলেই প্রশ্নের সৃষ্টি করে।’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আইনমন্ত্রী।


     এই বিভাগের আরো খবর