,

সারাদেশে নির্বাচনী উত্তাপ

সময় ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আগেভাগেই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলে। নিরুত্তাপ রাজনীতির পালে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না পেলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বাম দলের মাঠ পর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই দলীয় প্রতীক পেতে মরিয়া তারা। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের দারস্থ হচ্ছেন অনেকেই। প্রতীক বাণিজ্য হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকই ‘মুখ্য’ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে ২৪৫টি পৌরসভায় নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন- ইসি। আগামী মাসের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এরপর নতুন বছরের মার্চ মাস থেকে সাড়ে চার হাজার ইউপি নির্বাচন করারও সিদ্ধান্ত রয়েছে। ধাপে ধাপে জুন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌর নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় আওয়ামী লীগ : নির্বাচনে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার সুবাধে এবারই প্রথম তৃণমূলে দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেবেন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য প্রার্থীরা। তফসিল ঘোষণা না হলেও তৃণমূলে ইতিমধ্যেই ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তৃণমূলে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে তা ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের যৌথসভায় আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রেও কিছু পরিবর্তন আসবে। পরবর্তীতে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। এ নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকেও আলোচনা হতে পারে। পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তৃণমূল নেতাদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তৃণমূল নেতাদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠাতে পারেন। পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দ্রুতই পৌর ও উপজেলা নেতাদের কাছে দলের নির্দেশনা পাঠানো হবে। এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। তিনি বলেন, আগামী শনিবার দলের যৌথসভায় প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হবে। পরবর্তীতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেওয়া যাবে। এতদিন নির্দলীয় নির্বাচন হওয়ায় দেশের মানুষ কাদের পক্ষে আছে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি।’ ছাড় দেবে না বিএনপিও : এ নির্বাচনকে ‘অসৎ পরিকল্পনা’ মনে করলেও বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেবে না বিএনপি। তবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার অপেক্ষা করছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছেন খালেদা জিয়ার দিকে। তবে বেগম জিয়া দেশের বাইরে অবস্থান করলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনের প্রতি তার মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে। লন্ডন যাওয়ার আগে দলীয় নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তন হয় না। তাই এ নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের যে কেউ অংশ নিতেই পারেন।’ স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ সংকেত’ নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন বলে একাধিক প্রার্থী জানান। জানা যায়, দলীয় মোড়কে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নিলে দেশে ফিরেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে দলীয় গঠনতন্ত্রে কিছুটা সংশোধনী আনতে পারেন বেগম জিয়া। ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে বেগম জিয়া বৈঠক করবেন। এর পরই নির্ধারিত হবে, বিএনপি জোট কোন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জানা যায়, নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে। জোটগতভাবে অংশ নিলে এ নিয়ে ২০ দলের একটি সমঝোতা কমিটিও গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করা হবে। এ নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করেই চেয়ারপারসন সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এককভাবে লড়বে জাতীয় পার্টি : তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো না থাকলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। সংসদ নির্বাচনে ‘আসন’ ভাগাভাগি করলেও এবার সাংগঠনিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে চায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল। ইতিমধ্যে তৃণমূলের নেতারাও দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কেন্দ্রে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিশেষ করে দেশের জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত এলাকাগুলোতে জাতীয় পার্টির নেতারা ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দলীয় ফোরামে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আমরা বিনাচ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দেব না। সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তাতে জনগণ সরকারবিরোধী ভোট দেবে। আশা করছি, এ ভোট আমরা পাব।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে জামায়াত : দলের নিবন্ধন বাতিল করায় জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও বিকল্প পথে হাঁটছে দলটি। নির্বাচনী মাঠ ছাড়তে নারাজ তারাও। তাই জোটের শরিক বিএনপির সঙ্গে সমাঝোতা করে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে লড়ার পরিকল্পনায় এগুচ্ছে দলটি। জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতারা লড়বেন। সেক্ষেত্রে প্রতীক হবে ধানের শীষ। অন্যদিকে স্বতন্ত্র নির্বাচনেরও প্রস্তুুতি রাখছে দলটির তৃণমূল নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বামদলগুলোতেও চলছে প্রস্তুতি : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের বামদলগুলোতেও চলছে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। তাদের মাঠ পর্যায়েও চলছে সেভাবে প্রস্তুতি। জোটের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ (একাংশ), তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি প্রস্তুুতি নিচ্ছে ভোটে লড়তে। এ প্রসঙ্গে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে জাসদ অংশগ্রহণ করবে। তবে জোটগত না আলাদা তা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদের দল।’ গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম বলেন, গণতন্ত্রী পার্টি জোটগত না এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে- তা চূড়ান্ত করা হবে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে। অংশ নেবে সিপিবিও : আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এ নির্বাচনে অংশ নেবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ নির্বাচনে ‘কাস্তে’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন দলের প্রার্থীরা। গতকাল এক বিবৃতিতে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংগ্রামে সর্বশক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হতে দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর