,

দীর্ঘ ৪৪ বছরেও উদ্ধার হয়নি নবীগঞ্জ থানার অভ্যন্তরে থাকা ২ টি মন্দিরের ভূমি

উত্তম কুমার পাল হিমেল ॥ নবীগঞ্জে থানার অভ্যন্তরে দখলে থাকা কালী বাড়ী ও কানাই লাল জিউর আখড়ার ২৯ শতক ভূমি দীর্ঘ ৪৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এনিয়ে নবীগঞ্জের হিন্দু জনসাধারনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাক হানাদার বাহিনী ঐ মন্দিরের তৎকালীন সেবায়েত সুরেশ চৌধুরীকে গুলি করে হত্যার পর মন্দির ২ টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর পরই নবীগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের দেবোত্তর সম্পদ শ্রী-শ্রী-কালিবাড়ী ও কানাই লাল জিউড় আখড়া দুটি থানা কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরে চলে যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে ঐ জায়গা ফেরত চেয়ে অনেক আবেদন করেও আখড়া দুটির ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বিষয়টিকে আইনগত জটিলতা হিসেবে অভিহিত করেছে। দেবোত্তর সম্পদ ও ধর্মীয় আখড়ার ভূমি উদ্ধারের কৌশল নিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঘরোয়া বৈঠকের পাশা-পাশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে উপজেলার হিন্দু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তথ্যানুুসন্ধানে জানাযায়, নবীগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বরাক নদীর তীরে পুরাতন থানা কম্পাউন্ডের অভ্যন্তরে বিদ্যমান নবীগঞ্জ মৌজার জেএল নং-৮৮,খতিয়ান নং ২০৮, দাগ নং-৩০৯ এর ১৪ শতক ভূমিতে শ্রী-শ্রী-কালিবাড়ি এবং খতিয়ান নং ৯২, দাগ নং-৩১০ এর ১৫ শতক ভূমিতে শ্রী-শ্রী-কানাই লাল আখড়া বিদ্যমান ছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্ট পাকহানাদার বাহিনী ঐ আখড়ার তৎকালীন সেবাইত সুরেশ চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে আখড়া দুটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে দখল করে নেয়। স্বাধীনতার পর পরই পুলিশ প্রশাসন সেখানে কাঠাতারের বেড়া দিয়ে আখড়ার ২৯ শতক ভূমিসহ ঐ জায়গায় তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায় অস্থায়ী থানা ক্যাম্পাস চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে নবীগঞ্জের হিন্দু নেতৃবৃন্দ ওই দেবোত্তর সম্পদ ফেরত চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানালে ও অদৃশ্য কারনে এর উদ্ধার কাজ এগিয়ে যায়নি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে নবীগঞ্জের কৃতিসন্তান তৎকালীণ অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে ঐ দোববোত্তর সম্পত্তি ফেরত চেয়ে বিষয়টি অবহিত করেন হিন্দু নেতৃবৃন্দ। লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হিন্দুসমাজের পক্ষে আওয়ামীলীগ নেতা মিহির কুমার রায় মিন্টু। কিন্তু এখন পর্যন্ত উদ্ধার কাজ প্রক্রিয়ার কিছুই সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে ও বিগত বিএনপি সরকারের আমলে তৎকালীণ বিএনপি নেতা তৎকালীন এমপি আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া স্বরামন্ত্রণালয়সহ দলের হাইকমান্ডে ঘটনাটি অবহিত করেন। উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষরে নির্দেশনায় লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সার্ভেয়ার নিয়োগ করেন। জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা থেকে প্রেরিত ১৪/১/ক-০৩ এবং ১৬০২/০৫ নং স্বারকে সহকারী কমিশনার ভূমির সমন্বয়ে ভূমির সীমনা নির্ধারনে দেবোত্তর সম্পত্তির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। তৎকালীন সার্ভেয়ার আহাদ আলী ০২/০১/৯৭ এর ০৩ (২) এর আলোকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয়,এস.এ.রেকর্ডের মালিকানার ভিত্তিতে দুটি আখড়ার সেবাইতের নামে উল্লেখিত পরিমাণের ভূমি রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। দুটি আখড়ার মোট ২৯ শতক ভূমি পুলিশ প্রশাসনের নিজেস্ব ভূমির সঙ্গে একত্রীভুক্ত হয়ে বাউন্ডারী দেয়ালের অভ্যন্তরে রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের নিকট ৩০৯ ও ৩১০ দাগের ভূমির স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর নবীগঞ্জ থানা ভবন ঐ জায়গা থেকে সরিয়ে পাশ্ববর্তী অন্য জায়গায় নতুন ভবন নির্মান করে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে ঐ খালি জায়গা অব্যবহৃত হিসাবে পড়ে রয়েছে। যেহেতু ঐ জায়গা খালি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেহেতু নবীগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেবোত্তর সম্পি টুকু ফেরত পাবার জন্য পুনরায় জোর চেষ্টা করেন। উক্ত জায়গা পুনরায় ফেরত চেয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কালীপদ ভট্রাচার্য্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রনালয়ে লিখিত আবেদন প্রেরণ করেন। কিন্তু আবেদনপত্র প্রেরণ করলে প্রধানমন্ত্রী ও ভুমি মন্ত্রনালয় থেকে কয়েকবার আবেদনকৃত ভুমির সরজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন চাইলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে প্রতিবেদনগুলো মন্ত্রনালয়ে গিয়ে ফাইল চাপা পড়ে যায়। যার ফলে মন্দির দুটির ভুমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ সরকারের তৎকালীন মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস পোনামাছ অবমুক্ত করার জন্য সরকারী সফরে নবীগঞ্জে আসলে পুনরায় ঐ দেবোত্তর সম্পত্তি ফেরত চেয়ে হিন্দুÑবৌদ্ধÑখ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিহির কুমার রায় মিন্টু লিখিত আবেদন প্রেরণ করেন। কিন্তু তাও এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। ধর্মীয় প্রতিষ্টান দুটির ২৯ শতক ভুমি উদ্ধারের দাবীতে নবীগঞ্জ বিগত ২০১১ সালের ৩১ শে অক্টোবর নবীগঞ্জ নতুন বাজার মোড়ে নবীগঞ্জের হিন্দু জনসাধারনের উদ্যোগে সকল ধর্মের মানুষের উপ¯ি’তিতে এক স্নরনকালের সবচেয়ে বড় মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ শে সেপ্টেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কালীপদ ভট্রাচার্য্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক উত্তম কুমার পাল হিমেল এর যৌথ স্বাক্ষরে পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ অন্যান্য স্থানে আবেদনের অনুলিপি প্রেরন করেন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী কর্তৃক ধ্বংসকৃত ও বর্তমানে নবীগঞ্জ থানা পুলিশের দখলে থাকা ঐ কালীবাড়ী ও কানাই লাল জিউড় আখড়ার ভুমি উদ্ধারের জন্য অধুনালুপ্ত কালীবাড়ীর স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিকি কালীপুজা বিগত ১ যুগ ধরে পাশ্ববর্তী ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে অনুষ্টিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১০ ই নভেম্বর মঙ্গলবার স্থানীয় ডাকবাংলোয় মন্দির দুটির জায়গা উদ্ধারের আশায় প্রতিকি কালীপুজা অনুষ্ঠিত হবে। আর বর্তমানে এ খালি জায়গাটুকু যেহেতু নবীগঞ্জ থানা পুলিশের কোন কাজে আসছে না। তাই মন্দিরের স্মৃতি রার্থে ঐ জায়গা ফেরত পাওয়া নবীগঞ্জের সকল মানুষের এখন প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর