,

লতিফকে নিয়ে নতুন খেলা; আ-সি-তে-ছে হেফাজত!

সময় ডেস্ক ॥ হজ, মহানবী (সা.) ও তাবলিগ জামাত নিয়ে নিউ ইয়র্কে আপত্তিকর বক্তব্য দেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার উত্তাপ এসে লাগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। তবে বড় কিছু ঘটতে না দিয়ে তার বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয় সরকার ও আওয়ামী লীগ। মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ ও দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। নিজের বক্তব্যের প্রতি অনড় লতিফ সিদ্দিকী একটুও টলেননি। বরং তখনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুযোগ পেলেই তিনি দেশে ফিরবেন। সরকার আর ইসলামী দলগুলোর অবস্থান দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, সহসা দেশে ফিরছেন না লতিফ সিদ্দিকী। তবে সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলে তিনি যে দেশে আসবেন তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অবশেষে সেটিই সত্যিই হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতে ২২ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে এসেছেন লতিফ সিদ্দিকী। এখনো গ্রেপ্তার হননি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ কেন ফিরলেন লতিফ? রবিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সবাইকে চমকে দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পা রাখেন সরকার ও আওয়ামী লীগের সাবেক এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার চমকের চেয়েও ফেরার সময় নিয়ে সবাই চমকিত। বিএনপি আন্দোলনে যাচ্ছে এমন বলাবলির আগ মুহূর্তে কেন দেশে ফিরতে এই সময়কে বেছে নিলেন লতিফ সিদ্দিকী, সেটাই এখন সবচেয়ে আলোচ্য। তাকে নিয়ে ইসলামী দলগুলোর বাইরে শেখ শওকত হোসেন নিলুর হরতালের ডাক আর সরকারের লুকোচুরি- সবকিছু মিলিয়ে অন্য হিসেবে কষছেন বিশ্লেষকরা। লতিফ দেশে ফিরেছেন এ খবর পাওয়ার পর পরই ঢাকা ঘেরাও এবং লাগাতার হরতালের হুমকি দেয় হেফাজতে ইসলাম। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির হুমকি দেয় সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের জোটও। তবে ইসলামী দলগুলোর চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণার আগে লতিফকে গ্রেপ্তার এবং তার শাস্তির দাবিতে নিলুর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফ আজ মঙ্গলবার হরতাল ডেকে বসে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে এসে সরকারি আনুকূল্যে গঠিত এনডিএফ জোটের কর্মসূচি অনেককে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। অবশ্য লতিফকে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে বৃহস্পতিবার হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট। লতিফ ইস্যুতে এর আগে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ হরতাল পালন করলেও বিক্ষোভ-বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ ছিল হেফাজত। এছাড়া লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে সোমবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। আর আজিমপুর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী এই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। সোমবার এক বিবৃতিতে দলটি লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে এই ইস্যুতে দেশে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াত। এদিকে, অন্তত ২২ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও লতিফ সিদ্দিকীকে নিরাপদে বিমানবন্দর টার্মিনাল ত্যাগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা বিশ্লেষকদের ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি। এছাড়া রবিবার রাতে দেশে ফিরলেও সোমবার রাত নাগাদ লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের তেমন সরকারি তৎপরতা দেখা যায়নি। উল্টো তাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে স্পিকার এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী একে অপরকে দায় চাপাতে থাকেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সংসদ সদস্য হওয়ায় লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতি লাগবে। তবে প্রতিক্রিয়ায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বলেছেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে অনুমতির প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে সরকারের লুকোচুরির ঘটনায় ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত খুঁজছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের সমর্থন থাকায় পুলিশি পাহারায় বিমানবন্দর ত্যাগ করতে পেরেছেন লতিফ সিদ্দিকী। সরকার তাকে নিয়ে ‘নাটক’ সাজিয়েছে। লতিফকে নিয়ে ‘নতুন খেলা’; রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লতিফকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না হলে ধরে নিতে হবে সরকারের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েই দেশে ফিরেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে লতিফকে দিয়ে রাজনীতির ‘নতুন নাটক মঞ্চস্থ’ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সবার প্রশ্ন- বিএনপির যখন ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনে প্রস্তুতি সারছেন তখন কেন ফিরলেন লতিফ সিদ্দিকী। মূলতঃ লতিফকে ঘিরে আন্দোলনে সমর্থন দিলে বিদেশিদের এটা দেখানো সম্ভব হবে- বিএনপি আদৌ ধর্মনিরপেক্ষ নয়, একান্তই জঙ্গি সম্পৃক্ত একটা দল। লতিফ ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলনে গেলে আওয়ামী লীগের লাভ। তখন আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব দেখবে- বিএনপি আসলে ইসলাম নিয়েই আছে। এদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বিশ্বাস করা যাবে না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখাই হবে পশ্চিমাদের জন্য ‘নিরাপদ’। আবার লতিফ ইস্যুতে বিএনপি উদাসীনতা প্রদর্শন করলে ইসলামী দলগুলো বিএনপি থেকে সরে দাঁড়াবে। ইসলামপন্থীরা দেখবে- লতিফের মতো ইস্যুতে বিএনপি নিশ্চুপ। তাহলে বিএনপি আর আওয়ামী লীগে পার্থক্য কী? এতেও বিএনপির স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। এনডিএফ জোট ও আওয়ামীপন্থী ইসলামী দলগুলো কিংবা হেফাজতসহ স্বতন্ত্র ইসলামপন্থী দলগুলো লতিফ ইস্যুতে আন্দোলনের মাঠ গরম করলে বিএনপির অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবির আন্দোলন চাপা পড়ে যাবে। অবস্থাদৃষ্টে সেটির দিকেই পরিস্থিতি এগোচ্ছে বলে মনে করছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর