,

২১ মেয়র, ১৯২ কাউন্সিলর ও ৫৩ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ প্রচার-প্রচারণায় অন্তত দশ ধরনের বিধি-নিষেধ

আব্দুল হামিদ ॥ হবিগঞ্জের পাঁচ পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ২৬৬ জন প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে এ প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। পাঁচ পৌরসভার ২১ মেয়র প্রার্থী, ১৯২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৫৩ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিকে মাধবপুর পৌরসভা বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিককে আচরণ বিধি লঙ্গন করে জীবন্ত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শোডাউন করায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উপজেলা রির্টানিং অফিসার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম গতকাল সোমবার দুপুরে বিএনপি প্রার্থী হাবিবুর রহমান মানিক এ জরিমানা করেন। হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে ৫ জন, কাউন্সিলর পদে ৫১ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। মেয়র পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান সেলিম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত আলহাজ্ব জি কে গউছ (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান (নারিকেল গাছ), ইসলামী শাসনতন্ত্র দলের আব্দুল কাইয়ূম (হাতপাখা) ও পিপল্স পার্টির আব্দুল কাদির (আম) প্রতীক পেয়েছেন। নবীগঞ্জ পৌরসভার পাঁচ মেয়র প্রার্থী, ৪১ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির মাহমুদ চৌধুরী (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম রানা (জগ), জুবায়ের আহমদ চৌধুরী (মোবাইল) প্রতীক বরাদ্দ পান। শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় সাত মেয়র প্রার্থী, ২৯ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চুনারুঘাট পৌরসভায় দুই মেয়র প্রার্থী, ৪৪ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৩ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, মাধবপুর পৌরসভার দুই মেয়র প্রার্থী, ২৯ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৭ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। মাধবপুরে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা রিটানিং অফিসার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। মেয়র পদে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন হিরেন্দ্র লাল সাহা, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন হাবিবুর রহমান মানিক। গতকাল প্রতীক বরাদ্ধের পরপরই প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের মিছিল বা মশাল মিছিল বা যানবাহনে মিছিল সহকারে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। প্রচার-প্রচারণায় অন্তত দশ ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মাইক্রোফোনের ব্যবহার ঃ প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি একটি ওয়ার্ডে পথসভার জন্য একটি এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি মোট দুইটি মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রচারণা দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পোস্টার, হ্যান্ডবিল বা লিফলেট ঃ প্রার্থীর পোস্টার হতে হবে সাদা-কালো। পোস্টারের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৬০ সেমি এবং প্রস্তে ৪৫ সেমি। এতে ছাপানো ছবি পোট্রেট হতে হবে এবং কোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে নেতৃত্ব দান, প্রার্থনারত অবস্থা ইত্যাদি ভঙ্গিমার ছবি ছাপানো যাবে না। নির্বাচনী প্রতীকের আকার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। পোস্টার কেবল নির্বাচনী এলাকায় ঝুলানো যাবে। কোনো স্থাপনার দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার বা হ্যান্ডবিল বা লিফলেট লাগানো যাবে না। দল প্রধানের ছবি ঃ প্রার্থী তার পোস্টারে তার ছবি ছাড়া কেবল দলীয় প্রধানের ছবি ছাপাতে পারবেন। দলীয় প্রধানের ছবি লিফলেটেও ছাপানো যাবে। মিছিল বা শোডাউন ঃ নির্বাচনে যেকোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন নিষিদ্ধ। প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ যেকোনো প্রকারের মিছিল বা মশাল মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না। ইসি অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট কেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যান চালাতে পারবেন না। সভা-সমিতির বাধা-নিষেধ ঃ পথসভা বা ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো সভা করতে পারবেন না। তবে ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে তা অবহিত করতে হবে। আর পথসভা কোনো স্থানে এমনভাবে করা যাবে না, যাতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা হয়। এছাড়া অন্য প্রার্থী কোনো পথসভা বা ঘরোয়া সভায় বাধা দিতে পারবেন না। বিলবোর্ড ঃ নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। অথবা অন্য কোনো কাঠামো বা বৃক্ষ ইত্যাদিতে স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না। গেট-তোরণ বা ঘের নির্মাণ ঃ নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের গেট-তোরণ বা ঘের নির্মাণ কিংবা জনগণের চলাচলের অসুবিধা হয় এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রচারণার জন্য ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে প্যান্ডেল নির্মাণ করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করতে পারবেন না প্রার্থীরা। কোনো সড়ক কিংবা জনসাধারণের চলাচলের নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস করা যাবে না। ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচারণা নিষিদ্ধ ঃ নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ মসজিদ, মন্দির বা উপাসনালয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। মোটরসাইকেলে নিষেধাজ্ঞা ঃ নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক বা টেম্পো চলাচল ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকরা এসব যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া জরুরি পণ্যবাহী বাহন বা অ্যাম্বুলেন্সও এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না। আবার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আগে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে নির্বাচন পূর্ব সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় সভাপতিত্ব বা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অথবা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে জড়িত হবেন না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে দলীয় এবং কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন।


     এই বিভাগের আরো খবর