,

খোলা চিঠি———————–

মাননীয় জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ।
জনাবা,
আমার সালাম গ্রহণ করবেন। গত ৭ জানুয়ারী হবিগঞ্জ এর স্থানীয় দৈনিক খোয়াই পত্রিকায় “হবিগঞ্জের ছাত্ররা পরীক্ষায় পাশ করেছে কিন্তু তাদের মধ্যে কোন মেধা নেই” আপনার এই বক্তব্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। নিতান্ত একজন মূর্খ হিসাবে আরও কিছু বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। আমি আমার লেখায় অযাচিতভাবে নিজের কথা উল্লেখ করতে হয়েছে। এ জন্য যদি পাঠক মহল মনে করেন নিজের ঢোল নিজেই পিটিয়েছি তাহলে আমার বক্তব্য হলো, নিজেকে বড় জ্ঞানী-গুণী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কোন ইচ্ছা নাই। শুধু যুক্তির খাতায় কিছু কিছু ব্যক্তি বিশেষ ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা উল্লেখ করতে হয়েছে। সে জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। শুধু সার্টিফিকেট পেলেই শিক্ষিত হয়েছেন বলা যায় না। শিক্ষিত হয়েও যদি আমি মূর্খের মতো কথাবার্তা বলি তাহলে আমাকে মূর্খ বলাই সংগত। আমি একজন প্রবাসী, লেখাপড়া ও জীবন ধারনের জন্য ইংল্যান্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করিতেছি। এখন বয়স হয়েছে এবং মারাত্মক মানষিক অশান্তিতে ভুগিতেছি। একজন ডিপ্রেশন রোগী হিসাবে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখি আমারই লেখা ডিপ্রেশন বিষয়ক বই থেকে আমাকেই উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আমার লেখা আইনের পরামর্শমুলক বই রয়েছে যাহা লন্ডনের একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ানো হয় এবং সেই বইটির নাম হলো “এশিয়ান কমিউনিটি ওয়ারকার্স কোর্স”। আমার স্ত্রী চাইল্ড মেন্টার বিশেষজ্ঞ ছিলেন। সে কারনে অমার স্ত্রীর সহযোগী হিসেবে একটি কোর্সে সার্টিফিকেট নিয়েছিলাম। আজ আমার স্ত্রী একজন ডিপ্রেশন রোগী। আর তখন থেকেই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত শিশু বা অভিভাবকদের সাথে সময় কাটিয়েছি এবং তাদেরকে দেখাশুনা, ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে গেছি। ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রন না রাখলে মানষিক রোগে পরিনত হয়। আর তাই ডিপ্রেশন রোগীকে একজন অহিষ্ণু সমাজ কর্মীর অধীনে দেখাশুনার মধ্যে থাকতে হয়। সমাজ কর্মমূলক পেশাটা আমার পছন্দনীয় তাই আমি সমাজ সেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। আপনাদের দোয়ায় শুধু সমাজ সেবামূলকই নয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিষয়ের উপর শিক্ষা গ্রহণ করেছি এবং একাধিক ডিগ্রী ও ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট নিয়েছি। আমার অত্যান্ত প্রিয় স্নেহভাজন ছোটভাই আমাদের সংগঠনের হবিগঞ্জ কমিটির সেক্রেটারী মোঃ ফজলুল হক আমাকে বলে যে, “আপনার লেখা পান্ডলিপি নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছেন, প্রচার করছেন না কেন? আপনাকে তো লোকজন সেভাবে জানেনা বা ছিনে না”। আমি বলতে চাই অনেক কিছু পড়েছি এবং করেছি, সাধারন একজন প্রবাসী হিসাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারনে এবং আমার মনের তাগিদে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছি। এই খোলা চিটিতে সব কিছু লেখা সম্ভব নয়। আপনারা ভাবতে পারেন আমার এই লেখায় আমাকে নিয়ে শুধু গুণাবলী কির্তন করে যাচ্ছি। আসলে ইহা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার লেখার উদ্দেশ্য হলো এতো লেখাপড়া করে, উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেও সেভাবে আমরা হবিগঞ্জবাসী প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারছিনা। আর তাই নিজেকে আজ মূর্খই মনে হচ্ছে। মাননীয়া জেলা প্রশাসক যেভাবে ক্ষোভের সাথে বক্তব্য দিয়েছেন আমি একজন মূর্খ হিসেবে তা যথার্থই মনে করছি। জনাবা, আপনি যথার্থই বলেছেন যে, হবিগঞ্জের মাটিতে অনেক গুণীজন জন্ম গ্রহণ করেছেন যেমন- বৃন্দাবন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাবু বৃন্দাবন সাহা, জেনারেল আব্দুর রব বীরউত্তম, শচীন্দ্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাবু শচীন্দ্র দেব, বিশ্ব বিখ্যাত সমাজকর্মী ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মরহুম জনাব শাহ এস এম কিবরিয়া, মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজী প্রমূখ। পইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন বিপিন পাল যিনি অবিভুক্ত ভারতবর্ষের একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যাহার জন্ম জায়গা দেখার জন্য মহাত্মা গান্ধিজী পইলে এসেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৪ নম্বর জালালপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডেকে বীর বিক্রম উপাধি দিতে চাইলে, সাদী সাহেব বলেন, আমি খেতাব বা সার্টিফিকেটের জন্য যুদ্ধ করিনি, আমি যুদ্ধ করেছি দেশের আমোঘ কর্তব্যের জন্য। এমন জ্ঞানী গুণীজন বর্তমান হবিগঞ্জে এখন আর দেখতে পাওয়া যায়না। জনাবা, দুঃখের সহিত একটি কথা বলতে চাই, হবিগঞ্জের মাটিতে একটি বিদ্যা বুদ্ধি বিকাশ কেন্দ্র করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বুদ্ধিজীবি নামদারী কিছু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। আপনি যেভাবে হবিগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তার জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আমি একজন ছোটখাটো লেখক। আমার মাতৃভুমি পিছিয়ে পড়া অবস্থায় আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা। তাই ডিপ্রেশনে ভুগী। আমি বাংলায় মহাকাল ও ইংরেজীতে ঞযব ঊসবৎমবহপু ড়ভ ইধহমষধফবংয এবং হবিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক জীবন সম্মন্ধে লেখার চেষ্টা করেছি। পরিশেষে আমি বলতে চাই, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের হবিগঞ্জে আগের মতো জ্ঞানী গুণী জন্ম দান করেন। আশা করি আপনি আমাদের সহযোগীতা করবেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার সহায় হউন।
ধন্যবাদান্তে:-
দেওয়ান কাইয়ুম
সাবেক প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ এসোসিয়েন, যুক্তরাজ্য।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্য।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রবাস ফাউন্ডেশন, যুক্তরাজ্য।


     এই বিভাগের আরো খবর