,

শেরপুরে চলছে ঐহিত্যবাহী মাছের মেলা

রিপন দেব ॥ শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে মাছের মেলা। এখনও তা চলছে। তবে মাছের মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়ে আগে পিছে তিনদিনে বর্ধিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। বাঙালির সংস্কৃতিতে বারো মাসে তেরো পার্বনের একটি পার্বন হলো পৌষ সংক্রান্তি। মূলত: অগ্রহাণের ধান কাটার পর থেকে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। প্রাকৃতিক অবস্থার উপর নির্ভর অনেক পার্বন আজ বিলুপ্ত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে আয়োজন হয় মাছের মেলা। মেলাস্থল শেরপুর হলো মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার একেবারে শেষভাগে। পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কুশিয়ারা নদী। নদী পার হলেই সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা। হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজার এই তিনটি জেলার মোহনা হচ্ছে শেরপুর। মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবী অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মাছের মেলা এটি। এটি যদিও মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও বিভিন্ন পসরার কয়েক হাজার দোকান বসে কুশিয়ারার তীর জুড়ে। মেলায় এখন মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায়। এছাড়া শিশুসহ সব শ্রেণীর মানুষকে মাতিয়ে তোলার জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ ও চড়কি খেলা। টানা তিনদিন এ মেলা চলবে। এলাকার বয়োবৃদ্ধ অনেকেই মেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, সেই ছোটবেলা থেকে এই মাছের মেলা দেখে আসছেন। তবে কিভাবে মেলা শুরু হয়েছিলো। তাদের কেউই সঠিক ইতিহাস জানেন না। আগে এই মাছের মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন হাওর-বাওরের, নদ-নদীর মাছ নিয়ে আসতো জেলেরা। এখন মৎস্য খামারগুলোর মাছতো আসেই। আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরাট বিরাট চালান। সিলেটের কুশিয়ারা নদী, সুরমা নদী, মনু নদী, হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বাঘ, রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, আইড়সহ বিশাল বিশাল মাছ নিয়ে আসেন। মাছের মেলায় পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের কমে চাহিদার মাছ কেনা যায় না। কারণ মাছের মেলা বলে কথা। বড় ব্যবসায়ীরা সপ্তাহ খানেক পূর্বে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করতে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দাম ও হাঁকা হয়। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেলাকে ঘিরে চলে অশ্লীল নৃত্য ও জমজমাট জুয়ার আসর বসে বলে জানান এলাকাবাসী। স্থানীয় সূত্র জানায়, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আড়ত থেকে ছোট বড় অনেক জাতের মাছ নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। মাছের গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে পুরো এলাকা। মেলায় ছোট আকারের মাছের দাম হাকানো হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের মাছের দাম হাঁকানো হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং বড় সাইজের মাছের দাম ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকাও হাঁকানো হয়। এছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে শেরপুর, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশেপাশের গ্রামের প্রবাসীরা প্রতিবছর মেলার জন্য দেশে এসে থাকেন। মৎস্যজীবিরা জানান, এবছর কুশিয়ারা নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মেলায় তিন থেকে সাড়ে তিনশ মাছের ব্যবসায়ীরা জড়ো হন। মেলায় কয়েক কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে।


     এই বিভাগের আরো খবর