,

গ্র“পিং, লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন শতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে নবীগঞ্জে জমে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনের আমেজ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া। ফের জমে উঠছে তৃণমূলের রাজনীতি। নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে ইউপি নির্বাচনে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও মাঠের বিরোধী দল বলে খ্যাত বিএনপি। দুই শিবিরেই চলছে জোর প্রস্তুতি। দলীয় একক চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ে ইতো মধ্যে মাঠ জরিপ শুরু করেছে আওয়ামীলীগ। অন্যদিকে, ইউপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূলে প্রার্থী বাছাইয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন পাঠিয়েছে বিএনপি। দেশের প্রধান এই দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলেও দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতিপর্ব চলছে। প্রচারনায় পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের। প্রবাসী অধ্যুষিত নবীগঞ্জ উপজেলায় ৩ মাস আগ থেকেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। ইতিমধ্যে অনেক লন্ডন প্রবাসী প্রার্থীরা দেশে আসতে শুরু করেছেন। আগামী মার্চ মাসে প্রথম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ফলে এ নির্বাচনকে ঘিরে নবীগঞ্জ উপজেলার তৃণমূলের রাজনীতি জমে উঠেছে। শো-ডাউনসহ বিভিন্নভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে বড় দুই দলের সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। দলীয় সমর্থন পেতে ধর্না দিচ্ছেন দল দুটির শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে। তবে পৌর নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় উভয় দলই। দল দুটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অপকটেই স্বীকার করছেন, এত ইউনিয়ন পরিষদে দলের একক প্রার্থী বাছাই করা বেশ কঠিনই হবে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে তাঁদের চেষ্টার কোন ক্রটি থাকবে না। ১৯৮৩ সালে নবীগঞ্জকে মান উন্নিত থানায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ.এম.এরশাদের আমলে নবীগঞ্জকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে আড়মোড়া দিয়ে ওঠা এই এলাকার সুন্দর্যের যেন কোনো অংশে কম নেই। বিশেষ করে এই এলাকার প্রাকৃতিক অবস্থা অন্যান্য উপজেলার তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে। ১৬৯ দশমিক ৭ স্কয়ার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই এলাকায় সর্বমোট ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। রয়েছে ২২০টি মৌজা ও ৩৫৯টি গ্রাম। ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই নবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯শত ৬৭ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৬ হাজার ৪ শত ৫৩ জন। মহিলা ভোটার- ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫শত ১৪ জন। এবারের ইউপি নির্বাচনে ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ২০জন লন্ডন প্রবাসী বিভিন্ন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা ছাড়া ও বর্তমান, সাবেক, স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থীসহ প্রায় শতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদন্ধীতার জন্য মাঠে প্রচার প্রচারনায় প্রায় সক্রিয় রয়েছেন। নবীগঞ্জ উপজেলা প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় প্রায় প্রতিটি নির্বাচন হয় অনেক ব্যয় বহুল। যদি ও নির্বাচন আচরনবিধিতে ব্যয়ের পরিমান নির্ধারন করা তাকে কিন্ত এ উপজেলায় ভিন্ন। প্রচুর পরিমানে টাকার ছড়াছড়িতে নির্বাচনী হিসেব নিকেশ অনেক সময় পাল্টে যায়। এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে :- ১নং বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়নে ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি সমর চন্দ্র দাশ, ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক গৌতুম কুমার দাশ, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সত্যজিত দাশ, ইউপি বিএনপির সভাপতি স্মৃতিভুষন দাশ, জাতীয় পার্টি নেতা ভুলা দাশ, উপজেলা জামায়াত শিবিরের সভাপতি আলিমুল ইসলাম। ২নং বড় ভাকৈর পশ্চিম ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) আওয়ামীলীগ নেতা মেহের আলী মহালদার, সাবেক চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ছুবা, সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার মিয়ার ছেলে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আওয়ামীলীগ নেতা জাকারিয়া হোসেন বকুল, ইউপি বিএনপির সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আশিক মিয়া, লন্ডন প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা আবু নাসের, লন্ডন প্রবাসী দিদার আহমেদ, বিএনপি নেতা বজলুর রহমান। ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা আব্দুল বাতেন, সাবেক চেয়ারম্যান লন্ডন প্রবাসী নজমুল ইসলাম নজরুল, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালিক, সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা আমিনুর রহমান স্বপন, বজলুর রশিদ বজলু, আওয়ামীলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজ, ইউপি জাতীয় পার্টির সভাপতি সিরাজ উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, লন্ডন প্রবাসী আকিকুর রহমান, লন্ডন প্রবাসী আব্দুল হারিছ, লন্ডন প্রবাসী জাহিদুর হোসেন। ৪নং দীঘঁলবাক ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউপি বিএনপির সভাপতি ছালিক মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাঈদ এওলা মিয়া, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম হোসেন, ইউপি জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল হান্নান চৌধুরী চাঁন মিয়া, বিএনপি নেতা শামিম আহমদ চৌধুরী। ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি দিলাওর হোসেন, আওয়ামীলীগ নেতা মছদ্দর আলী, লন্ডন প্রবাসী মুহিবুর রহমান হারুন, যুবলীগ নেতা আব্দুল হামিদ নিকসন। ৬নং কুর্শি ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) লন্ডন প্রবাসী সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদ, সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি লন্ডন প্রবাসী আলী আহমেদ মুছা, যুবলীগ নেতা আব্দুল বাছিত চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক উজ্জল সরদার, লন্ডন প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা অনর উদ্দিন জাহিদ, জামায়াত নেতা শফিকুর রহমান লেচু মিয়া, লন্ডন প্রবাসী আবু তালিম চৌধুরী নিজাম, লন্ডন প্রবাসী শামসুল হুদা চৌধুরী বাচ্চু, ইউপি জাপা সাধারন সম্পাদক মোঃ আফজল মিয়া। ৭নং করগাও ইউনিয়ন, (বর্তমান চেয়ারম্যান) বিএনপি নেতা ছাইম উদ্দিন, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক নির্মলেন্দু দাশ রানা, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি বজলুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা শফিকুর রহমান। ৮নং নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউপি বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরী, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি (অবঃ) প্রাপ্ত সাজেন্ট মোঃ মিরাজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু, পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক হারুনুর রশিদ হারুন। ৯নং বাউশা ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) আনোয়ারুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লন্ডন প্রবাসী আলহাজ্ব জুনেদ হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু সিদ্দিক, থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছা সেবকদলের আহবায়ক শিহাব আহমদ চৌধুরী, থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোঃ মজিদুর রহমান মজিদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লন্ডন প্রবাসী আলহাজ্ব জুনেদ হোসেন চৌধুরী, লন্ডন প্রবাসী জুয়েল আহমদ। ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) এডভোকেট মাসুম আহমেদ জাবেদ, সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা আ.ক.ম ফখরুল ইসলাম কালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবীন্দ্র কুমার দাশ রবি, ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মুহিত চৌধুরী, ইউপি বিএনপির সাবেক সভাপতি রজব আলী, লন্ডন প্রবাসী আবুল হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাপ্তান মিয়া, সাধারন সম্পাদক এডভোকেট জালাল আহমদ, বিএনপি নেতা আমীর হোসেন। ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল খায়ের গোলাপ, সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাবেক চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ, মুক্তিযোদ্বা কমান্ডার নুর উদ্দিন বীর প্রতীক, জেলা প্রজন্মলীগ সহ-সভাপতি লন্ডন প্রবাসী শেখ মাসুদুর রহমান মাসুদ, ইউপি বিএনপির সভাপতি শফিউল আলম বজলু, সাধারন সম্পাদক আবুল খয়ের কায়েদ, বিএনপি নেতা শাহ মুস্তাকিম, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান মিয়া, যুবলীগ নেতা জমসেদ আলী, সুহেল রানা তালুকদার, জাপা নেতা কাপ্তান মিয়া, ইউপি জাতীয় পার্টির সভাপতি ছুফি মিয়া, সাধারন সম্পাদক নুরুল হক তুহিন। ১২নং কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, ইউপি জাতীয় পার্টির সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী সাজু মিয়া, ইউপি বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মেরাজ মিয়া, লন্ডন প্রবাসী সাবেক মেম্বার জাফর মিয়া, লন্ডন প্রবাসী এলাইচ মিয়া। ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়ন:- (বর্তমান চেয়ারম্যান) ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ ইজাজুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা অবঃ প্রাপ্ত সাজেন্ট জাহিদ আহমদ চৌধুরী, ইউপি জাতীয় পার্টির সাধারন সম্পাদক কর্পোরাল (অবঃ) লুৎফুর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট আতাউর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সকল দলেরই মনোনিত প্রার্থী ছাড়া বিদ্রোহী কোন প্রার্থী না থাকায় তেমন মাথা ব্যথা ছিলনা। পৌর নির্বাচনের পর এবার প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে ও মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থিতা। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে ডজন ডজন সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে থাকায় তাদের মধ্যে থেকে একক দলীয় প্রার্থী বাছাই খুবই কঠিন হবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। তবে রাজনৈতিক নেতাদের মতে, সব ইউপিতে একক প্রার্থী নির্বাচন করা কঠিন হলেও তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। কোন ইউপিতে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই নয়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকল দলের শীর্ষ নেতারা একক চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। দুই জোটের ব্যানারে নির্বাচনের সম্ভাবনা না থাকায় প্রধান দুই জোটে থাকা শরীক দলগুলোও এককভাবে ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও সুত্রে জানা গেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর