,

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য : নবীগঞ্জে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বাড়ী ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল বলে খ্যাত দিনারপুর এলাকার ঐতিহ্য আজ হারাতে বসেছে। দিনারপুর পরগনার বাশ, গাছ ও পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে উজার করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। যার ফলে দিনারপুরের পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। এদিকে দেশী বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানী এসে দিনারপুর অঞ্চলের পানিউমদা এলাকার বড় বড় পাহাড় নিধন করে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাক্টরী তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ফায়দা হাসিল করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। মানুষকে ধোকা (২য় পৃষ্ঠায় দেখুন) দিয়ে বোকা বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে এসব সিন্ডিকেটে প্রকাশ্যে জড়িত আছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা। অর্থের লোভ দেখিয়ে মানুষের বসত বাড়ি ভেঙ্গে রাস্তা নির্মাণ করে টাকা দিচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা। ফলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। গতকাল পানিউমদা ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার বড়গাঁও গ্রামে একটি গ্যাসকুপের সন্ধান পাওয়ায় বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের পেট্রো বাংলা কোম্পানি সেখানে ১০নং কুপ (গ্যাস ফিল্ড) নির্মান কাজ শুরু করেছে। এর জন্য বড়গাঁও গ্রামের বড় একটি পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট এবং কোম্পানির কাজে নিয়োজিত বড় বড় গাড়ী যাতায়াতের জন্য বড়গাঁও গ্রামের রাস্তাটি বড় করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে কোম্পানীর বিভিন্ন কাজ ভাগিয়ে আনতে এবং কন্ট্রাক রাখতে এলাকায় তৈরী হয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। এই সব সিন্ডিকেটে স্থানীয় ইউপি’র কর্তাগণ সহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন জড়িত। পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থানে মাটি নিয়ে যাওয়া ও রাস্তা বড় করার কন্ট্রাক পায় কে এন হারবর কনসুডিয়াম, সততা এন্টারপ্রাইজ ও সান রাইজ নামের তিনটি সিন্ডিকেট। এই তিনটি সিন্ডিকেটে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি আওয়ামীলীগ, বিএনপি নেতা ও এলাকার প্রভাবশালীরা। এই তিন সিন্ডিকেট যৌথ ভাবে সাপ্লাইর কাজ পায়। পেট্রো বাংলা কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত রাস্তাটি বড় করতে গিয়ে অনেকেই ঘর বাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রাস্তার পাশে যাদের ঘর বাড়ি ও জায়গা ছিল তাদেরকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সিন্ডিকেটের সদস্যরা চুক্তি করে তাদের ভূমির উপযুক্ত মূল্য প্রদান করে রাস্তাটি বড় করবে। এলাকার স্বার্থে রাস্তাটি বড় করে সংস্কার করবে এবং রুলিং করে পাকা করণ করার আশ্বাস দেওয়া হয়। এই আশ্বাস পেয়ে লোকজন তাদের ঘর ভেঙ্গে রাস্তার জন্য তাদের মালিকানা ভূমি ছেড়ে দেয়। ইতিমধ্যে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে শেষ হওয়ার পথে থাকলেও এই অসহায় লোকদের ভূমির ন্যায্য মূল্য প্রদান করা হয়নি। রাস্তার জন্য ঘর ভেঙ্গে ভূমি দেয়ায় অনেকেই মানবেতব জীবনযাপন করছেন। আবার অনেকেই দোকান, ফসল ও গাছ কেটে রাস্তা বড় করার স্বার্থে জায়গা দিয়ে দেন। কিন্তু অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে রাস্তার কাজ চললেও এখন পর্যন্ত তাদের জায়গার মূল্য পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্থরা। অভিযোগ রয়েছে, জায়গার টাকা পেতে হলে টাকা দিয়ে অফিসে আবেদন করতে হবে বলেও হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেটের লোকজন। এনিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা আন্দোলনে নামবেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বড়গাঁও গ্রামের সাবেক মেম্বার এলাইছ মিয়া বলেন, “কোম্পানী আমরারে টেকা দিবো কইয়া জায়গা নিছে, কিন্তু রাস্তার কাম শেষ অইযার এবো আমরার টেকা দিচ্ছেনা। চেয়ারম্যান সাব এর দায়িত্ব নিছলা, অকন তাইন তারিখ করইন”। আমিনা বেগম নামের এক গৃহবধূ কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, “রাস্তার কান্দাত আমার ঘর আছলো, তারা আমারে টেকা দিবো কইছে। তেই আমি ঘর ভাইঙ্গা দিছি, অখন আমার তাখার জেগা নাই, মানুষের বাড়ী তাকি। আমার জায়গার টেকা দিলেতো আমি নিজে ঘর বানাইয়া তাকতাম পারমু।” নুর মিয়া জানান, “আমার নিজের ১০ শতক জায়গা আছলো, ৭ শতকই রাস্তার লাগি নিছেগি। এখনও টেকা দিছেনা। চেয়ারম্যান সাব কইছলা দিবা এখন তাইন আমরারে পাত্তা দেইন্না।” এছাড়া ওই গ্রামের তৈয়ব আলী, সুফি মিয়া, আনফর আলী, তাহির আলীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন সাংবাদিকদের কাছে এই সব কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, অনেকেই বর্তমানে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের কথামতো হবিগঞ্জ এলো অফিসে যেতে যেতে হাজার হাজার টাকা খুইয়েছেন। এছাড়াও ওইসব কাজে স্থানীয় কোন শ্রমিককে নেওয়া হচ্ছেনা। যারা প্রভাবশালী তারা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাব কাটিয়ে ফায়দা হাসিল করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। একই সময় দেখা হয় অপর সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য যুবলীগ নেতা মুহিত মিয়ার সাথে, তিনি বলেন- আমরা তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সাপ্লাই কাজের কন্ট্রাক এনেছি। আমরা আমাদের অফিসারদের পরামর্শ মতে কাজ করছি। তিনি বলেন- মানুষ তাদের সুবিধার্থে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে রাস্তার কাজে জায়গা দিয়েছে। তাদের টাকা এলো অফিস দিবে, আমরা জানিনা। এ সব নিয়ে এলাকায় গত ক’দিন ধরে উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলনের ঘোষনা দিয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর