,

সুন্দ্রাটিকির বাতাসে এখনো লাশের গন্ধ

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবল উপজেলার সুন্দ্র্রাটিকি গ্রামে এখনো বাতাসে লাশের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বসন্ত বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বিশেষ করে যেখান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার মানুষ লাশের গন্ধ বেশি পাচ্ছে। গতকাল সোমবার সরজমিনে ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। করাঙ্গী নদীর পাড়ের বাসিন্দারা জানান- লাশ উদ্ধারের সময় লাশগুলো থেকে গন্ধ বের হয়েছিল। ওই গন্ধ এখনো বাসাতে আসে। তারা ঘরে রান্না করে খাওয়ার সময়ও লাশের গন্ধ লাগে বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা কুলসুমা বেগম। তিনি বলেন- লাশগুলো উদ্ধারের সময় এলাকাজুড়ে গন্ধ বয়ে যায়। ওই গন্ধ এখনো যায়নি। শুধু কুলসুমা নয়, একই এলাকার বাসিন্দা ছফরজান বিবি জানান- বাতাসে এখনো লাশের গন্ধ পাওয়া যায়। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- নিষ্পাপ শিশুদের কি অপরাধ ছিল? ওদের কেন হত্যা করা হয়েছে? শিশুদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান তিনি। এদিকে, শোকে স্তব্ধ সুন্দ্রাটিকি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চারিদিকে সুনসান নীরবতা। মাঝেমধ্যে সন্তানহারা মায়ের আহাজারিতে সেখানকার আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের শ্বান্তনা দেয়ার মতো যেনো কেউ নেই। আর যারা সান্তনা দিতে যাচ্ছে তারা হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। এছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িও রয়েছে পুরষশূণ্য। শুকের ছায়া লেগেছে সুন্দ্রটিকি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। সহপাঠীদের হারিয়ে তারাও যেন নির্বাক হয়ে পড়েছে। এছাড়াও শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের হারিয়ে শোকে স্তব্দ হয়ে পড়েছেন। সোমবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায় ওই স্কুলটিতে গিয়ে। শান্ত সুন্দ্রাটিকিতে শোকের ছায়া : বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজার থেকে পূর্বের ৫ কিলোমিটার দূরের বাঁশ ঝাড়ের গ্রাম সুন্দ্রাটিকি। বাগানগুলো শান্ত, পাখির কলকাকলিতে মুখর। গাছপালায় ঘেরা মেঠোপথে খেলা করে শিশুরা। এখানে পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই হয় বিচার আচার। তাই পুলিশি ঝামেলাও নেই। তবে হঠাৎ করেই সুন্দ্রাটিকি গ্রামের সৌন্দর্য মলিন করে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ৪ শিশুকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায়। যে উঠোনে খেলা করতো শুভ, মনির, তাজেল আর ইসমাইল, সেখানে আজ তাদের শোকে কাঙালী ভোজ খাওয়ানোর আয়োজন হচ্ছে। চলছে সন্তানহারা পরিবারে শোকের মাতম। ওই গ্রামের ৮টি পঞ্চায়েতের একটি হাজী আব্দুল খালেক মাস্টারের। ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার নিয়ে একটি পঞ্চায়েত। আর একজন তার প্রতিনিধিত্ব বা সর্দারের কাজটি করেন। বিচার-আচার ভাল মন্দের সিদ্ধান্ত দেন। খালেক মাস্টারের পঞ্চায়েতের ৪ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তার ছায়া পড়েছে পুরো গ্রামে। এমনকি অভিযুক্ত আব্দুল আলির পঞ্চায়েতের শিশুদের নিয়েও ভয়ে রয়েছেন বড়রা। গত কদিন ধরে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। নির্মল এই গ্রামে এখন পুলিশের পাহারা বসেছে। দিনরাত পুলিশ আর সাংবাদিক আসছেন খোঁজ নিতে। খুন হয়ে যাওয়া শিশু ৮ বছরের ইসমাইলদের মাটির ঘর। ফোঁকরের মতো জায়গা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় এ ঘরে। ইসমাইলের মা ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে ওঠেন। বলেন, ওর হাতের লেখা খুব সুন্দর আছিলো। দেখবেন নি? বাবা আব্দুল কাদের বলেন, দেখিয়ে কি লাভ! শোকই তো বাড়বো। বাকি ৩ শিশুর ঘর পাশেই। এই পরিবারের কর্তারা সবাই কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করেন। ছোট ছোট মাটির ঘরে নিজেদের নিয়েই থাকতেন তারা। সেখানে উঠোনে চলছে রান্না-বান্নার আয়োজন। শিশুদের স্বজনদের শান্তনা ও কাঙ্গালী ভোজের চাল ডাল পেয়াজ তেল রসূন সহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এসেছেন সিলেট, হবিগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। রান্না-বান্না শেষ করে নিজ হাতে সবাইকে খাবার তুলে দিয়েছেন তিনি। এই গ্রামের অন্য পঞ্চায়েতগুলো হচ্ছে- আব্দুল মঈন সুমন, ওস্তার মিয়া, নূর আলী, আব্দুল হাই, আখন মিয়া, আব্দুল কদ্দুছ এবং আব্দুল মালেক। আর আব্দুল মইন সুমনের পঞ্চায়েতই চালাচ্ছিলেন আব্দুল আলি ওরপে বাগাল। পঞ্চায়েতের দ্বন্ধের ফলেই ৪ শিশু হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে সুন্দ্রাটিকি।


     এই বিভাগের আরো খবর