,

গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর শুনে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে উদাও ডাক্তার ও কর্মচারীরা : চরম দুর্ভোগে রোগীরা

আব্দুল হামিদ ॥ হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের ডাক্তারসহ ১৩ জন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যুর সংবাদ শুণে শতাধিক রোগী রেখে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন ডাক্তার নার্সসহ কর্মচারীরা। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে হাসপাতালে রোগী ছাড়া কোনো ডাক্তার নার্স ব্রাদার নেই। প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভিন অসুস্থ্য হয়ে সদর হাসপাতালে গেলে এক ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে জরুরি বিভাগে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেহরক্ষী ও জজকোর্টের কর্মচারীরা হাসপাতালের ব্রাদার হাবিবুর রহমানকে আটক করলে ডাক্তার ও নার্স ব্রাদাররা তাৎক্ষণিক দুই ঘণ্টা কর্মবিরতী পালন করেন। গত সোমবার রাত ৯টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। এদিকে মঙ্গলবার সকালে জজকোর্টের কর্মচারীরা হাসপাতালে ভর্তি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে দেখতে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার ও ব্রাদার নার্সরা কর্মচারীদের উপর হামলা করে। জামাল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী তাতে আহত হন। কর্মচারীরা জজকোর্টের নাজির ওসমান রেজাউল করিমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবাদে জজকোর্টের কর্মচারীরা আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রেখে সভা করেন। একপর্যায়ে জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহসহ বিচারকরা এজলাস থেকে নেমে যান। বিকেলে আবারো কোর্ট বসে। বিকেলে জজকোর্টের নাজির ওসমান রেজাউল করিম বাদী হয়ে সদর হাসপাতালের ডাক্তার মইনুদ্দিনসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্বপালনে অবহেলা, অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এসএম হুমায়ূন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। ওয়ারেন্ট ইস্যুর সংবাদ শুণে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান সকল ডাক্তার ব্রাদার ও নার্সসহ কর্মচারীরা। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রোগী ও তাদের আত্বীয় স্বজন ছাড়া কেউ নেই হাসপাতালে। এ অবস্থায় রোগীদের কেউ কেউ শহরের ক্লিনিকগুলোতে যেতে শুরু করেছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সোমবার রাতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভিন উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগে ভুগলে তার অফিসের কর্মচারীরা হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। হাসপাতালের ডাক্তার রেদোয়ান অতিরিক্ত দায়রা জজকে বাসায় দেখে আসেন এবং অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। জজকোর্টের নাজির রেজাউল জানান, অতিরিক্ত দায়রা জজের পরিচয় পাওয়ার পরও নূন্যতম সৌজন্যতা বোধ ও দ্রুত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই করেননি ডাক্তার ও ব্রাদাররা। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাকে ট্রলিতে করে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক্তাররা পরামর্শ দেন। একটি ক্যাবিন চাইলেও তারা দেননি। এমনকি জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারদের জন্য রক্ষিত কোনো একটি রুমে অবস্থানের অনুরোধ করলেও তারা অবজ্ঞা অবহেলা করেন। এ ব্যাপারে ডাক্তার মইনুদ্দিন জানান, অতিরিক্ত দায়রা জজকে কোনো ধরনের অমর্যাদা করা হয়নি। হাসপাতালের কোনো কেবিন খালি না থাকায় এবং ডাক্তারদের জন্য রক্ষিত কোনো রুম না থাকায় সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে অবশ্য অপারেশন রুমের পাশের ওয়েটিং রুমে অতিরিক্ত দায়রা জজকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। মামলার বাদী ওসমান রেজাউল করিম জানান, একটি অস্বস্থিকর পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত দায়রা জজকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো নিরাপদ মনে না করে আমরা তাকে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে বাসায়ই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতালের ব্রাদার ও মামলার আসামি আব্দুল আওয়াল জানান, আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছি।


     এই বিভাগের আরো খবর