,

চুনারুঘাটের মরণ ফাঁদ সর্বনাশা ইটেরভাটা

চুনারঘাট প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জ জেলার অন্যতম শস্য-শ্যামল উপজেলা নামে খ্যাত চুনারুঘাট। পর্যটকদের মন কাড়া হরেক প্রজাতির বন্য প্রাণী সমৃদ্ধ গভীর অরণ্য সাতছড়ি, কালেঙ্গা, পাশাপাশি অর্থকরী ফসলের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত চা বাগানের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। এ উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের বসবাস। রয়েছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনসহ বহু সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মক্তবÑমাদ্রাসা। প্রতিদিন হাজার হাজার কোমলপ্রাণ ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল-কলেজে সারি বেঁধে আসা-যাওয়া করে। চুনারুঘাটের উর্বর মাটিতে ফসল উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় শতকরা সত্তর ভাগ মানুষ। এখানের মুক্ত বাতাসে পরিশ্রান্ত দেহ শান্তি খুঁেজ পায়। কিন্তু বর্তমানে এ মুক্ত বাতাস দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোমলপ্রাণ ছাত্র-ছাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যধি সৃষ্ঠি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ চুনারুঘাটের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্তভাবে গড়ে উঠেছে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য হুমকি স্বরূপ ইটেরভাটা। ইটেরভাটার আধিক্যতায় বিভিন্ন জটিলতায় ভূগছে চুনারুঘাটবাসী। এর ক্ষতিকারক কালো ধোঁয়া দিনকে দিন মানবদেহ ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। ভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটি খনন করে নেয়া হচ্ছে ফসলের জমি থেকে। যার ফলে ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। এ ক্ষতিকারক ধোঁয়ার কারণে আকাশ পথের সৌন্দর্য পাখিদের আজকাল এখানে উড়ে বেড়াতে দেখা যায় না। দিন দিন মানুষের বিভিন্ন রোগÑ শ্বাস কষ্ট, হাঁচি, কাশিসহ বিভিন্ন চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। ইটেরভাটা যেন আজ হয়ে ওঠেছে মরণ ফাঁদ। সরকারি নিয়ম-নীতি ও প্রচলিত বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমির উপর ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা। আর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। যার ফলে উজার হচ্ছে গ্রামসহ বিভিন্ন বনাঞ্চলের বৃক্ষ। এর কালো ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফলের গাছ আগের মতো ফল দেয় না। ভাটার চারপাশে রয়েছে আবাদি ফসল ও অসংখ্য ঘরবাড়ি। সরকারি নীতিমালায় রয়েছে, আবাদি জমি ও বসতবাড়ি থেকে এক কি. মি. পর হতে হবে ইটভাটার অবস্থান। কিন্তু সে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটাগুলো। আর প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইটভাটা নির্মাণ করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই। ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সালের সংশোধিত আইন মোতাবেক সরকারি লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত ইটভাটা স্থাপন, ইট প্রস্তুত করা কিংবা ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের ৫ ধারায় সংরতি, হুকুম দখল বা অধিগ্রহণকৃত বা সরকারের কাছে ন্যাস্ত আবাদি জমি, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি, আবাসিক এলাকা, ফলদ বাগান থেকে এক কি. মি. দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার কোনো ইটভাটার মালিক তার ধার-ধারছেন না। একাধিক ইটভাটার মালিক তাদের ইটভাটার এক কি. মি. এর মধ্যে বসতবাড়ি বাগান ফসলি জমি থাকার কথাও স্বীকার করেন। উপজেলার কয়েকজন সচেতন নাগরিক জানান, অতিরিক্তভাবে ইটেরভাটা নির্মাণের ফলে তাদের ফসলি জমি, বনজ ও ফলদ বাগান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাটার পাশ্ববর্তী জমিতে প্রচন্ড উত্তাপের কারণে পূর্বের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। তারা আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল হয়ে পড়েছেন। পরিবেশ ও মানবদেহের সুস্থ্যতার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে একজন সুনাগরিক সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবর র্লিখিত আবেদন করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন উপজেলার সচেতন মহল।


     এই বিভাগের আরো খবর