,

ভুঁইফোড় সংগঠন নিয়ে বিপাকে আওয়ামীলীগ

সময় ডেস্ক ॥ আ.লীগের বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব সংগঠনের নেতারা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বা কখনো কখনো সমর্থক সংগঠন পরিচয় দিচ্ছে। আ.লীগের অঙ্গসংগঠনের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করছে অহরহ। এছাড়া মন্ত্রী-এমপিদের দিয়ে তদবির করানো, বিভিন্ন প্রজেক্ট হাতিয়ে নেওয়া, পদক বাণিজ্য, চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে তদবির করাসহ অসংখ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে তারা। ভুঁইফোড় সংগঠন মূলত লিফলেট, ভিজিটিং কার্ড, ব্যানার-ফেস্টুন-সর্বস্ব। দলীয় ও সরকারি বৈধ কোনো অনুমোদন না থাকলেও এ সংগঠনের নেতাদের দৌরাত্ম্য এতই বেড়ে চলেছে যে, খোদ দলীয় অনেক নেতাকে পর্যন্ত তারা তোয়াক্কা করেন না। বিষয়টি আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এসব নামসর্বস্ব সংগঠন বাড়ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য এ বিষয়ে গণমাধ্যকে বলেন, দল ক্ষমতায় থাকায় শত শত ভুঁইফোড় সংগঠন গজিয়েছে দেশে। এরা দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অপকর্ম করে বেড়ায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা বুঝে অথবা না বুঝে এদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ ও যুব মহিলা লীগ দলের সহযোগী সংগঠন। এ ছাড়া ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর বাইরে কোনো সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নেই। কাগজ-কলমে না থাকলেও আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ, শেখ হাসিনা, শেখ রাসেলের নাম ব্যবহার করে অনেকেই সংগঠন খুলে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ভুঁইফোড় সংগঠনের অনুষ্ঠানে যেতে দলের নেতাদের একাধিকবার বারণ করলেও আওয়ামী লীগের অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতা এসব সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে যান হরহামেশাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা দেশে বিভিন্ন সময় ব্যানার-ফেস্টুনে অসংখ্য ভুঁইফোড় সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যায়। এ ধরনের সংগঠনের প্রায় কয়েকশ সংগঠন রয়েছে দেশে। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর মধ্যে শিশু লীগ, আওয়ামী দর্জি লীগ, আওয়ামী চালক লীগ, জননেত্রী চিন্তা লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী প্রচার ও প্রকাশনা লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী মোটরচালক লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, হারবাল লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, বঙ্গবন্ধু হামিওপ্যাথি লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী ওলামা লীগ অন্যতম। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ গণমাধ্যকে বলেন, এসব সংগঠনের একটিরও অনুমোদন নেই। এসব সংগঠনগুলোর যে কোনো অনুষ্ঠান বা কর্মকান্ডে দলীয় নেতাদের যাওয়া বা অংশগ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের ‘মৌসুমী চাঁদাবাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের কিছু লোকসহ কতিপয় ব্যক্তি মোসাহেবি ও চামচামি করে নাম ভাঙিয়ে সংগঠন গড়ে তোলেন। তাদের ব্যাপারে সবার সাবধান থাকতে হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর