,

হবিগঞ্জে অবাধে চলছে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সহজলভ্য হওয়ায় যে কেউ ব্যবহার করতে পারছেন ইন্টারনেট। একই সাথে বাড়ছে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীও। হবিগঞ্জে বিনা লাইসেন্সে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)। বিটিসিএল ছাড়াও জেলায় ৩টি প্রতিষ্ঠান মূলত ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে। এগুলো হচ্ছে- এম.এস অনলাইন, এম.টি নেটওয়ার্ক ও এয়ারলিংক কেবল নেটওয়ার্ক। এর মাঝে সম্প্রতি ইন্টারনেট সেবা দান বন্ধ করে দিয়েছে এয়ারলিংক কেবল নেটওয়ার্ক। এ বিষয়ে এয়ারলিংক কেবল নেট ওয়ার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস.এ খান এনাম জানান, তারা প্রায় ২ বছর পূর্বে লাইসেন্সের জন্য বিটিআরসিতে আবেদন করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাইসেন্স পাননি। বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার কারণে ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন বলে জানান তিনি। এম.টি নেটওয়ার্কের স্বত্ত্বাধিকারী গৌতম বিশ্বাস মিঠু জানান, তারা আলোক আইটি নামে একটি আইএসপি কোম্পানির সাব স্টেশন হিসেবে এম.টি নেটওয়ার্ক নাম দিয়ে হবিগঞ্জে আইএসপি ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, যে নামে তারা আইএসপি ব্যবসা করছেন সে নামে লাইসেন্সের জন্য তারা প্রায় ছয় মাস আগে আবেদন করেছেন কিন্তু এখনও লাইসেন্স পাননি। এম.এস আনলাইনের স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুদ্দিন জাবেদ বলেন, আমরা সময় ও টাকা ব্যয় করে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছি কিন্তু কিছুদিন যাবত কয়েকটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স ছাড়াই আইএসপি ব্যবসা করছে। ফলে আমাদের মতো বৈধ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছি। এসব অবৈধ আইএসপি ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধে দৃশ্যমান অভিযান চালানোর দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, দেশ ও জাতি গঠনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ইতোমধ্যে আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। ইনফো সরকার ডট নেট প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হচ্ছে। সরকারের এ ডিজিটাল সেবা যেন জনগণ সঠিক প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে আইএসপি প্রতিষ্ঠান সমূহকে মনিটরিং করা প্রয়োজন। আইসিটি নীতিমালার মধ্যে যাতে তারা কাজ করে এবং ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও বিটিসিএল এর স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এছাড়াও সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইনের যথাযত বাস্তবায়ন ও সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। হবিগঞ্জ বিটিসিএল-এর সহকারী প্রকৌশলী (টেলিকম) শিরিষ চন্দ্র দাশ বলেন, বর্তমানে হবিগঞ্জ সদরে তাদের ইন্টারনেট গ্রাহক আছে ১৪৮ জন। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে যারা আবেদন করবে তাদের ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা। এখন গ্রাহক ইন্টারনেট নিয়ে কি করবে তা আমাদের দেখার বিষয় না। এছাড়া স্থানীয়ভাবে যারা আইএসপি ব্যবসা করছে তাদের মনিটরিং করার দায়িত্ব সরকার আমাদের দেয়নি বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী আইএসপি লাইসেন্স নিতে হলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর ছয় থেকে সাত মাস অপেক্ষা করতে হয়। বিটিআরসি থেকে তদন্ত রিপোর্ট আসার পর লাইসেন্স ইস্যু হয়। তদন্ত চলাকালীন সময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার কোনো অনুমতি না থাকলেও হবিগঞ্জের কিছু আইএসপি ব্যবসায়ী অবাধে চালাচ্ছেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র লাইসেন্সের কাগজ জমা দিয়েই নিয়ম ভেঙ্গে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল এমন লাইসেন্সবিহীন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সনাক্তকরণ বা তাদের তদারকি করার জন্য স্থানীয় ভাবে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, হবিগঞ্জে ৩টি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধুমাত্র এম.এস অনলাইনের বৈধ লাইসেন্স থাকলেও বাকি ২টি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। অবৈধ ২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতিমধ্যে এয়ারলিংক কেবল নেটওর্য়াক তাদের ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে আলোক আইটি নামে একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টারনেট ডিলারশিপ এনে এম.টি নেটওর্য়াকের নামে আইএসপি ব্যবসা করছে। নিয়মানুযায়ী ‘এ’ ক্যাটাগরির লাইসেন্স দিয়ে সাব স্টেশন হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ব্যবসা করা যায়। সেক্ষেত্রে ওই কোম্পানির নাম, লগো ব্যবহার ও কোম্পানীর নিয়মনীতি অনুসরণ করা এবং ওই কোম্পানীর ব্যবহৃত সাব স্টেশনগুলোর তালিকা বিটিআরসিতে দাখিল করা বাধ্যতামূলক। অথচ এম.টি নেটওর্য়াকের নামে বৈধ লাইসেন্স না থাকার পরও এ প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নামে ইন্টারনেট ব্যবসা করছে এবং তারা যে প্রতিষ্ঠানের আইডি ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে সে কোম্পানীর নাম, লগো সাইনবোর্ডে ব্যবহার করছেনা। এমনকি আলোক আইটি যে বিটিআরসি শাখায় সাব স্টেশনের তালিকা দাখিল করেছে তারও কোনো উপযুক্ত প্রমান পাওয়া যায়নি।


     এই বিভাগের আরো খবর