,

নবীগঞ্জের ১৩ ইউপিতে আজ ভোটযুদ্ধ : আ’লীগ-বিএনপির প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহীরা : জামানত বাজেয়াপ্তের আশংকায় জাতীয় পার্টি

রিপন দেব ॥ উৎসব ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নের প্রার্থীরা আজ ভোটযুদ্ধ অবতীর্ণ হচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোট গ্রহণ। ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অপেক্ষায় প্রায় ২ লাখেরও বেশি ভোটার। এবারই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তৃণমূলের সবচেয়ে বড় এই ভোটকে ঘিরে গ্রামীন জনপদে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আছে শঙ্কাও। দলীয় আধিপত্যের এ নির্বাচনে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় রয়েছেন ভোটাররা। তবে নির্বাচনকে সুষ্টু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তারা। এছাড়া বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার মধ্য রাত থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার প্রচারণা। গতকাল বিকেলের মধ্যেই সব ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার ও অমোচনীয় কালিসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বও বুঝে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার ও নিরাপত্তা কর্মীরা। নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১৩২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল বাতেন খাঁন। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের হিসেবে অনুযায়ী নিরাপত্তা চকও সাজানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। এবার নবীগঞ্জের ১৩ টি ইউনিয়নে মোট ৭৬ জন চেয়ারম্যান, ৫৫৭ জন সাধারণ সদস্য ও ১৫৯ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ১৩, বিএনপির ১২ ও জাতীয় পার্টির মনোনীত ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন আরো ৪২ জন। প্রায় অর্ধেকের বেশি ইউপিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মী তাদের মদদ দিচ্ছেন। ইউনিয়নওয়ারী নির্বাচনী জরিপে সাধারণ ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়- ১নং পশ্চিম বড় ভাকৈর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সমর চন্দ্র দাশ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সত্যজিত দাশের মধ্যে দ্বিমুখী প্রতিদ্ধন্ধিতা হবে। ২নং পুর্ব বড় ভাকৈর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মেহের আলী মহালদার এর সাথে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আশিক মিয়ার মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৩নং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বজলুর রশীদ চৌধুরী বজলু, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আকিকুর রহমান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জামাল হোসেন এর ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতার সম্ভবনা রয়েছে। ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ছালিক মিয়ার সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মোঃ এওলা’র দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মুহিবুর রহমান হারুন ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ দিলাওর হোসেন এর তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৬নং কুর্শি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহমেদ মুসা, বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান খালেদ ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আব্দুল বাছিত এর মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতার সম্ভবনা রয়েছে। ৭নং করগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ছাইম উদ্দিন এর সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু দাশ রানা’র দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ৮নং নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল মুক্তাদির চৌধুরীর সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু’র। ৯নং বাউসা ইউনিয়নে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আনোয়ারুর রহমান এর সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আবু সিদ্দিক এর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এড. জাবিদ আলী ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ.ক.ম ফখরুল ইসলাম কালাম এর দ্বিমুখী লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে। ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শাহ্ নেওয়াজ এর দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ১২নং কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক চৌধুরীর মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইজাজুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানের তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। তবে জনমত জরিপে এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি থেকে এগিয়ে রয়েছে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দুই একটি ইউনিয়ন ছাড়া সবকটি ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্তের আশংকা রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর