,

মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বনাম বে-সরকারী শিক্ষকদের হতাশা

মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ভেস্তে যেতে বসেছে। এ টু আই প্রোগ্রামের সহায়তায় শিক্ষামন্ত্রনালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে ২৭ হাজারের বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মালটিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন করা হয়েছে। একটি ল্যাপটপ, একটি মডেম, একটি প্রজেক্টর, প্রজেক্টর স্কিন, সাউন্ড সিস্টেম সহ মালটিমিডিয়া ক্লাশরুম শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশ সরকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উদাসীনতায় সরকারের এ মহান উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। কারন হিসাবে অনুসন্ধানে জানাগেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনিহা, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত শিক্ষকদের ল্যাপটপ সমস্যা, ডিজিটাল ক্লাশ তৈরীতে বাসায় দীর্ঘ সময় ব্যয়, সরকারের খবরদারী না থাকায়, শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা এসব নানাবিধ কারনে উক্ত প্রকল্প অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকার থেকে সরবরাহকৃত ল্যাপটপ নিম্ন মানের হওয়ায় অনেক ল্যাপটপ অকেজো হয়ে ভাঙ্গা আলমারিতে পড়ে আছে। অনুসন্ধানে হবিগঞ্জ জেলার ৮টি উপজেলার গত মে মাসের মালটিমিডিয়া ক্লাশরুম নেয়ার চিত্র নিম্ন রুপঃ জেলায় সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোট ১০৭ টি উচ্চ বিদ্যালয়। তন্মধ্যে হবিগঞ্জ সদর থানায় মোট ১৭ টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ টি বিদ্যালয়ে মোট ১৪০টি ক্লাশ নেয়া হয়। নবীগঞ্জ উপজেলার ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠানে মোট ৮৫টি ক্লাশ, চুনারুঘাট উপজেলার মোট ১৮ টি প্রতিষ্ঠানের ৬টিতে ১৮টি ক্লাশ, বানিয়াচং উপজেলার মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠানের ৪টিতে ৬৩টি ক্লাশ, মাধবপুর উপজেলার ২১ টি প্রতিষ্ঠানের ৩টিতে ১৬ টি ক্লাশ, লাখাই উপজেলার মোট ৯টি প্রতিষ্ঠানের ৬ টিতে ১৩৮ ক্লাশ, আজমিরিগঞ্জ উপজেলার ৪টি প্রতিষ্ঠানে মোট ১৩০টি ক্লাশ ও বাহুবল উপজেলার ৯টি প্রতিষ্ঠানের ৩টিতে ৬৪টি মালটিমিডিয়া কাশ নেয়া হয়। সমগ্র জেলায় ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত মে মাসে মোট ৬৫৩টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেয়। গত মে মাসে জেলায় সর্বোচ্চ মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ, মাধবপুর, বানিয়াচং, লাখাই, আজমিরীগঞ্জ ও বাহুবল। গত মে মাসে হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামী একাডেমী ১৩৮টি ডিজিটাল ক্লাশ, বুল্লা সিংহ গ্রাম লাখাই ৭২টি, মমচাঁন ভুইঁয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা আজমিরীগঞ্জ ৭০টি, একতা উচ্চ বিদ্যালয় বানিয়াচং ৫৬টি, জলসুখা কে,জি,পি উচ্চ বিদ্যালয় আজমিরীগঞ্জ ৩৮টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ নেয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে জেলার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে কোন মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ গত মে মাসে নেয়া হয় নাই। অনেক শিক্ষক উক্ত সিস্টেমকে বাড়তি একটি ঝামেলা মনে করছেন। অথচ সরকার হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন করেছে। এ বিষয়ে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন-যারা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত তারা সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পর ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশের বিষয়ে উদাসীন। আর আমরা তো বে-সরকারী শিক্ষক। বেতনের সরকারী অংশ পেতে তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করতে হয়। আর কোন সম্মানজনক ভাতা তো নাই-ই। মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ তৈরী করতে হলে বাসায় বাড়তি সময় ব্যয় করতে হয়। সরকার বেতনের যে অংশ দেয় তা- বিদ্যালয়ে সময় ব্যয় করার জন্য দেয়। বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে অন্য ধান্দা না করলে এই দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে। সরকারী চাকুরেদের মত বাড়ীভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা পাইলে হয়তো ডিজিটাল ক্লাশ তৈরীতে বাড়তি সময় ব্যয় করা সম্ভব হবে। এক কথায় বে-সরকারী শিক্ষকদের প্রতি সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ পরিত্যাগ করলে হয়তো উক্ত প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে পারে।

মোহাম্মদ লোকমান খান
সহকারী শিক্ষক
রুস্তমপুর ন’মৌজা সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
মোবাইল ঃ ০১৭৩১৬৭৫৪৭৯


     এই বিভাগের আরো খবর