,

বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ জনজীবন : বারবার লোডশেডিং : গ্রাহকদের ক্ষোভ

জসিম তালুকদার ॥ হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্রই লোডশেডিং। প্রচন্ড তাবদাহে এমন লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হবিগঞ্জবাসী। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অফিস-আদালতসহ বাসা-বাড়ি, কলকারখানার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এতদিন লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও গত এক মাস ধরে ধরে তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগের কারণে হবিগঞ্জবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হবিগঞ্জ জেলা সদরের শহর এলাকাতেই দিনে ২০ থেকে ২৫ বার আধ ঘন্টা থেকে পৌণে ১ ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। সম্প্রতি হবিগঞ্জ শহরে ৩৩ হাজার কেভি লাইন মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে কোন পুর্ব নোটিশ ছাড়াই এ লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুতের আসা যাওয়ার ফলে যন্ত্রণার যেন শেষ নেই। বিদ্যুত যন্ত্রণা আর তাপদাহে সৃষ্ট অতিষ্ঠ গরমে নাকাল হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন। অসহ্য যন্ত্রণায় ভোগান্তির অন্ত নেই। দিন নেই, রাত নেই সমানতালে হবিগঞ্জে চলছে বিদ্যুত বিভ্রাট, লোডশেডিং। লোক দেখানোভাবে কোন কোন সময় মাইকিং করে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা অথবা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানান, যেদিন মাইকিং করে বিদ্যুত নেয়া হয়, সেদিন আধঘন্টা আগে বিদ্যুত চলে আসে। এরপর চলে আসা যাওয়ার খেলা। ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৫০ বার বিদ্যুত আসে আর যায়। মোবাইল ফোনে বিদ্যুত অফিসের অভিযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে বেশিরভাগ সময়ই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে রিসিভ করলেও জানানো হয় সিস্টেম লস আর লাইনে ফল্টের কথা। এ ছাড়া বিদ্যুত অফিসের টেলিফোন লাইনটি ভিজি করে রাখা হয় ইচ্ছাকৃতভাবেই। ফলে ভুক্তভোগীদের জানার উপায় থাকে না কখন বিদ্যুত দেয়া হবে আবার কখন নেয়া হবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই থাকতে হয় বিদ্যুতবিহীন। এ যেন যন্ত্রণাময় এক পরিবেশ। দিনের চেয়ে রাতের বেলা বাড়িয়ে দেয়া হয় লোডশেডিং। আকাশে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুত চমকালেই বন্ধ করে দেয়া হয় সংযোগ। নিয়মিত বিদ্যুত বিল পরিশোধের পরও কারণে অকারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং ভোগান্তিতে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হবিগঞ্জের বিদ্যুত গ্রাহকরা। স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষকসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ ভোগ করছেন। এই হালে চলতে থাকা হবিগঞ্জে বিদ্যুতের পরিসেবার মানোন্নয়নে সহসাই দেখা যাচ্ছে না আশার আলো। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, গরমে বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক বেড়ে যায়। এছাড়া তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারে না। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে বড় ব্যবধান তৈরি হয়। পিক আওয়ারে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি হচ্ছে। অবশ্য তাদের এ অভিযোগ মানতে নারাজ ভোক্তভোগীরা। অনেকেই অভিযোগ করেন এটি কথার কথা। আজিজুল হক নামের এক গ্রাহক জানান, সন্ধ্যার পর বিদ্যুত থাকে না। ইদানিং সকালেও থাকছে না। প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুতের এ রকম ঘটনা ঘটে। হাবিবুর রহমান নামের আরেকজন জানান, আগে শহরে লোডশেডিং করা হলেও এখনকার মত নয়। এখন সময়-অসময়ে লোডশেডিং করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ২০ বার বিদ্যুত আসা যাওয়া করে। প্রতি এক থেকে দুই ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং করে বিদ্যুত সরবরাহ চালু রাখা হচ্ছে। শুধু হবিগঞ্জ শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যা আরও প্রকট। তাই বিদ্যুত নিয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটি কথা চালু রয়েছে-‘পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুত যায় না, বরং ২৪ ঘণ্টায় মাঝে মাঝে আসে। বিদ্যুত বিভ্রাটের ফলে রাতের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে গ্রাহকদের। একটি সুত্র জানায়, বিদ্যুত বিতরণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ বিভাগ অনিহা প্রকাশ করায় জাতীয় গ্রিড থেকে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ করা হচ্ছে। আর পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুত বিতরণ করা হচ্ছে। আর এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, লাইন মেরামতের কাজ করতে গিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিদ্যুত কর্মচারি জানান, পল্লী বিদ্যুত সরকারের নিকট বিদ্যুত কিনে নিয়ে গ্রামাঞ্চলে বিতরণ করে। ফলে এতদিন শুধু গ্রামাঞ্চলেই লোডশেডিং হত। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহ করতে গিয়ে শহরে লোডশেডিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ বিদ্যুত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুস্তম আলী হাওলাদার জানান, হবিগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে। ফলে একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে দুই বা একাধিক এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ দিতে হয়। এ ছাড়া মেরামতের কাজ থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর