,

হবিগঞ্জে প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ হবিগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে এ সংকট সবচেয়ে বেশি প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে। হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ পেলেও দ্রুত শিক্ষকরা সুবিধাজনক স্থানে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে ওঠেন। আর এ কারণেই মূলত ওই এলাকাগুলোর বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট সৃষ্টি হয়। অপরদিকে উচ্চ আদালতে মামলার কারণে প্রধান শিক্ষক পদে যেমন পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না, তেমনি সহকারী শিক্ষক পদে নতুন নিয়োগও দেয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিদ্যালয়ে প্যারা শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শূন্য রয়েছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদও। এতে দাফতরিক কাজেও ঘটছে মারাতœক ব্যাঘাত। বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমির চন্দ্র দাশ জানান, তার বিদ্যালয়ে ৯ জনের স্থলে তিনিসহ শিক্ষক আছেন ৪ জন। ফলে পাঠদানে তাদের মারাতœক সমস্যায় পড়তে হয়। সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং দুপুর থেকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস নিতে হয়। পরীক্ষার সময় দফতরির সহযোগিতাও নিতে হয়। আর ভাটি এলাকা হওয়ায় এখানে অনেক শিক্ষকই আসতে চান না। রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া জানান, তার বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মাঝে তারা আছেন ৩ জন। এখানে প্রধান শিক্ষক এবং একজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় পাঠদানে তাদের মারাÍক বেগ পেতে হয়। অবিলম্বে তিনি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানান। শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূর ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতে মামলা থাকার কারণে আবেদন পাওয়া সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি এবং সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। এমনকি আবেদনকারীদের পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছে না। অনেক বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটি প্যারা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান চালাচ্ছে। এটি আমাদের বিষয় নয়, কমিটি যাকে খুশি নিয়োগ দিতে পারে। তাদের সম্মানীও কমিটিই দেয়। এছাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় দাফতরিক কাজেও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৪৯টি। এর মাঝে সদ্য জাতীয়করণ হয়েছে ৩১৭টি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ৭৩০টি। এর মাঝে কর্মরত আছেন ৬৩১ জন। আর খালি আছে ৯৯টি পদ। সদ্য জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ৩৮৯৫টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৩৬২০ জন। জেলার সদর, লাখাই ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ৪৬টি পদের মাঝে শূন্য আছে ২৪টি। কর্মরত আছেন ২২ জন। একেকজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিক স্থানে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে মাঠপর্যায়ে এবং দাফতরিক কাজেও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যারা কর্মরর আছেন তারাও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন না। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান না। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে এমন বিদ্যালয়েই পরিদর্শন করেন। ফলে শিক্ষকরাও সুযোগ পেয়ে অনুপস্থিত থাকেন। স্থানীয় যে শিক্ষক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন শুধু তারাই নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। এ অবস্থায় একদিকে যেমন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে, তেমনি পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলকভাবে খারাপ হচ্ছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মাঝেও ক্ষোভের শেষ নেই।


     এই বিভাগের আরো খবর